ইসলামে নারীর মর্যাদা

  07-03-2018 11:47PM

পিএনএস ডেস্ক: মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষে বিভক্ত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যিনি তোমাদের (নারী-পুরুষ) কে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গীনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরকে যাঞ্চা করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। (সুরা নিসা : আয়াত ১)

ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। ইসলামের আগমনের আগে সামাজিকভাবে নারীদের কোনো মর্যাদাই ছিল না। নারীদের প্রতি করা হতো অমানবিক আচরণ। প্রাক ইসলামি যুগের দিকে তাকালেই তা অনুধাবন করা যায় যে, নারীর মর্যাদা প্রদানে ইসলামের অবদান কতবেশি।

ছোট্ট একটি উপমাতেই তা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। আর তাহলো-
‘অপমান বা পাপ মনে করে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া ছিল তৎতকালীন সময়ের নিত্য দিনের ঘটনা।’
ইসলামের আগমনের আগে কন্যা শিশু জন্মদানকে পাপ বা অপমান মনে করা হতো। যে কারণে কন্যা জন্ম হওয়ার পর সে শিশুটির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার ছিল না। সামাজিক মান-সম্মানের অজুহাতে ছোট্ট কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেয়া হতো।

ইসলাম এ অমানবিক সামাজিক বিপর্যয় থেকে প্রথমেই নারীর বাঁচার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মর্যাদা প্রদান করেছে। জীবন্ত কবর দেয়ার মহামারী থেকে নারীকে বাঁচাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ঘোষণা করেছেন-
‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’ (তিরমিজি)

ইসলামের প্রাথমিক যুগে কন্যা শিশুকে জীবন্ত হত্যা থেকে বাঁচাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী জাতির লালন-পালনের ব্যাপারে এ ফজিলতপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। অন্য হাদিসে প্রিয়নবি বলেছেন-
‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে আর সে তাদের লালন-পালনের কষ্ট সহ্য করবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ দেবে; কেয়ামতের দিন ওই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক তথা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (ইবনে মাজাহ)
ফজিলতমূলক নসিহত পেশ করার পর যখন কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা কিছুটা কমে আসে; তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
‘আমি তোমাদের গুরুত্বের সঙ্গে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমরা নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। তোমরা আমার এ নির্দেশ গ্রহণ কর।’ (বুখারি)

বর্তমান সময়ের মতো নারীদের পক্ষে যখন আন্দোলন বা অধিকার অধিকার বলে চিৎকার করার মতো কোনো মানুষ ছিল না; তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। সে সময় নারীদেরকে শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী হিসেবেই হেয় তথা অপমানকর দৃষ্টিতে দেখা হত।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার যুগের অজ্ঞ ও বর্বর মানুষের কাছে নারীদের সর্বোত্তম মর্যাদা ও সম্মানের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন-
‘মায়ের পায়ের তলে রয়েছে জান্নাত।’
যাতে কোনো মানুষ এ মায়ের জাতি নারীদের সঙ্গে খারাপ বা অন্যায়মূলক কোনো আচরণ করতে না পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নারীর অধিকার ও মর্যাদা যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব নারীকে ইসলামের সুমহান পতাকা তলে আশ্রয় লাভের জন্য কবুল করুন। সব নারীকে ইসলামের সুন্দর জীবনাচারে নিজেদের নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক আদর্শ জীবন ব্যবস্থা গ্রহণে নারী হোক আত্ম-প্রত্যয়ী। আমিন।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন