লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহ পছন্দ করেননা

  20-09-2018 04:49PM

পিএনএস ডেস্ক : শুধু আল্লাহকে রাজিখুশির উদ্দেশ্যেই ইবাদত করতে হবে। যে ইবাদতে রিয়া (লোক দেখানো) থাকে সেই ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তথাপি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত চালিয়ে যেতে হবে।

নির্জনের ইবাদতে রিয়া থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। শুধু আল্লাহ প্রত্যক্ষ করছেন মনকে এমন বশে আনতে নির্জনে ইবাদত করতে হবে। নির্জন স্থানে ইবাদতে মনের মাঝে একপ্রকার সন্তুষ্টি থাকে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এ ইবাদত দেখছে না। তাই শুধু আল্লাহকে পেতেই এ ইবাদত।

সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ওই বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী ও আত্মগোপনকারী (মানুষের চোখের আড়ালে থাকে)।’’ [ মুসলিম ২৯৬৫, আহমাদ ১৪৪৪, ১৫৩২]

আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম?’ মুহাম্মদ (সা.) বললেন, ‘‘ওই মু’মিন যে আল্লাহর পথে তার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করে।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি (সা.) বললেন, ‘‘তারপর ওই ব্যক্তি যে কোন গিরিপথে নির্জনে নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে।’’ [বুখারি ২৭৮৬, ৬৪৯৪, মুসলিম ১৮৮৮, তিরমিযী ১৬৬০, নাসায়ী ৩১০৫, আবূ দাউদ ২৪৮৫, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৮, আহমাদ ১০৭৪১, ১০৯২৯, ১১১৪১, ১১৪২৮]
গোপনে সালাতঃ

মহানবী (সা.) বলেন, “হে মানবসকল! তোমরা স্বগৃহে নামায আদায় কর। যেহেতু ফরয নামায ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামায হল তার স্বগৃহে পড়া নামায।” (নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭নং)

আল্লাহর রসূল (সা.) বলেন, “লোকচক্ষুর সম্মুখে (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা মানুষের স্বগৃহে নামায পড়ার ফজিলত ঠিক সেইরুপ, যেরুপ নফল নামায অপেক্ষা ফরয নামাযের ফযীলত বহুগুণে অধিক।” (বায়হাকী, সহিহ তারগিব ৪৩৮নং)
এমন কি মদিনাবাসীর জন্যও মসজিদে নববীতে নফল নামায পড়ার চাইতে নিজ নিজ ঘরে পড়া বেশি উত্তম। (আবূদাঊদ, সুনান, জামে ৩৮১৪নং)

গোপনে তিলাওয়াত
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেনঃ ‘সরবে কুরআন তিলাওয়াত প্রকাশ্য সদকাকারীর ন্যায় এবং নিরবে কুরআন তিলাওয়াত গোপনে সদকাকারীর ন্যায়।’ [আবূ দাউদ : ১৩৩৫; মুসনাদ আহমদ : ১৮৩৬৮]

গোপন আমল রোযা
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত (রা.) এরশাদ করেছেন, বনী আদমের সকল ভাল কাজের বিনিময় ১০ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়, তবে রোজা ছাড়া। মহান আল্লাহ পাক বলেন, রোজা একমাত্র আমারই জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই দেব। কারণ আমার বান্দা তার প্রবৃত্তির কামনা ও খাবার স্পৃহা একমাত্র আমার ভয়েই পরিহার করেছে। (মুসনাদে আহমদ)

গোপনে দান
যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং তা অভাবগ্রস্তদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। [সূরাঃ আল-বাকারাঃ ২৭১]

গোপনে আল্লাহর স্মরণ
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা:) বলেছেন: সাত প্রকার লোককে আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) তার আরশের ছায়ায় স্থান দান করবেন। সেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায় পরায়ন নেতা। ২. ওই যুবক যে তার যৌবন কাল আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন। ৩. এমন (মুসলিম) ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে, একবার মসজিদ থেকে বের হলে পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত ব্যাকুল থাকে। ৪. এমন দু’ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর মহব্বতে পরস্পর মিলিত হয় এবং পৃথ হয়। ৫. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ফেলে। ৬. যে ব্যক্তিকে কোনো সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী রমনী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান জানায় আর ওই ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ভয়েই বিরত থাকে। ৭. যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কি দান করলো বাম হাতও জানলো না। (বুখারী-মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ,সর্বোত্তম জীবকা হলো তা- যা প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট, আর সর্বোত্তম যিক্‌র (আল্লাহ্‌র স্মরণ) হলো তা- যা গোপনে করা হয়।” [রাসূলের চোখে দুনিয়া (কিতাবুয যুহদ)–ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ), হাদিস নং ৫৫]

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন