খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন শাস্তি চায় দুদক

  19-12-2017 10:13PM

পিএনএস : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দুইজনের যাবজ্জীবন শাস্তি চায় দুর্নীতি দমন কমিশন। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দাবি করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্কের শুনানিতে এ দাবি করেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে বকশীবাজারের অস্থায়ী ওই আদালতে পৌঁছান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রীর অরফানেজ ট্রাস্ট এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন স্থায়ীর আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করেন।

জামিন আবেদনের শুনানির পর অরফানেজ মামলায় পূর্বনির্ধারিত যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু করেন মোশাররফ হোসেন কাজল। মামলার পূর্বের অনুসন্ধান রিপোর্ট ও এজাহার পড়ার মধ্য দিয়ে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা একটানা শুনানির পর তা শেষ করেন।

যুক্তিতর্কে সাক্ষীর উদ্ধৃতি দিয়ে কাজল বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯১-৯৬ সময়কালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে এতিমদের জন্য ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার, যা তৎকালীন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হন। দেশে শত-সহস্র প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা থাকা সত্ত্বেও সেসব এতিম খানায় এ অর্থ প্রদান না করে সরকারি তহবিলে বিদ্যমান উক্ত টাকায় আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজ পুত্রদ্বয় তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান এবং মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে দিয়ে একটি নতুন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করেন। উক্ত অনুদানের টাকা থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বগুড়ায় একটি এতিমখানা স্থাপনের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকুলে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেন। উক্ত টাকা হতে ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে বগুড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা দিয়ে ২ দশমিক ৭৯ একর জমি কেনা হয়। কিন্তু ১৩ বছর কাল কোনো এতিমখানা স্থাপন না করায় উক্ত টাকা অব্যবহৃত রয়ে যায়। যা সুদে-আসলে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

উক্ত টাকা হতে খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমানকে দিয়ে ছয়টি চেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা টাকা গুলশানের প্রাইম ব্যাংকে এফডিআর হিসাব খোলার নামে স্থানান্তর করেন।

যুক্তিতর্কের শুনানির সম্পূর্ণ বক্তব্যে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর সরকারি কর্মচারী হিসেবে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড দাবি করেন।

অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানের ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দাবি করেন।

দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর আসামি পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য পূর্বনির্ধারিত দিন আগামীকাল বুধবার ও বৃহস্পতিবার ধার্য করেন বিচারক। ওই দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটিও শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। এরপর বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া আদালত অঙ্গন ছেড়ে যান।

আদালতের কার্যক্রম শেষে মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে আমরা আদালতে ৩২ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করেছি। এ ছাড়া সাক্ষ্যে আমরা অভিযোগ প্রমাণের সমর্থনে যে সমস্ত ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছি, তাতে আমরা মনে করি সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আদালতের কাছে আমরা সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি।’

এর আগে গত ১৯ ও ২৬ অক্টোবর এবং ২, ৯, ১৬ ও ২২ নভেম্বর এবং গত ৫ ডিসেম্বর অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

মামলাটিতে বিএনপি নেতা সচিব হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।

এতিমদের জন্য বিদেশি থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

দুই মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন