‘মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে’

  27-12-2017 07:12PM

পিএনএস ডেস্ক : দিনাজপুরে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ক্ষমতা দেখিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, সকল ক্ষেত্রেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। ‘আপনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। আল্লাহ মানুষকে ক্ষমতা দেন, রাষ্ট্র মানুষকে ক্ষমতা দেয়। আমরা সেই ক্ষমতা ব্যবহারের পদ্ধতি ভুলে যাচ্ছি।’

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের অবকাশকালীন বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রবীণ এক আইনজীবীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) বিরোদা রানী রায়কে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আপনার এত ক্ষমতা? আপনি শুধু প্রবীণ আইনজীবীকে কক্ষ থেকে বের করেই দেননি, কোর্ট বসিয়ে সাজাও দিয়েছেন!’

শুনানির শুরুতেই এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায়ের আইনজীবী মামুন মাহবুব ডায়াসের সামনে আসেন। প্রথমেই তিনি এসি ল্যান্ডকে তলবের আদালতের আদেশ পড়ে শোনান। এরপর এসি ল্যান্ডের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন দাখিল করেন। আবেদন এফিডেভিট আকারে দাখিল না করায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন এফিডেভিট আকারে দাখিল করতে বলেন।

এ পর্যায়ে আইনজীবী মামুন মাহবুবের কাছে আদালত এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায় এসেছেন কি না, তা জানতে চান। আইনজীবী ‘হ্যাঁ’-সূচক জবাব দিয়ে এসি ল্যান্ডকে ডায়াসের সামনে যেতে বলেন।

আদালত আইনজীবী মামুন মাহবুবকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট নিয়ে এত তোলপাড় হচ্ছে। উনি (এসিল্যান্ড) কি এসব নিউজ পড়েন না ? কয়েকদিন আগে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এ বিষয়ে অর্ডার হয়েছে।’

এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী ডায়াসের সামনে এলে আদালত সেদিনের ঘটনা জানতে চান। এসি ল্যান্ড বলেন, ‘ওই দিন জমিজমাসংক্রান্ত একটি মামলার হেয়ারিং চলছিল। এই সময় আইনজীবী বিনোদ বিহারী যান। রুমে বসার জায়গা না থাকায় আমি উনাকে বাইরে যেতে বলি এবং পরে আসতে বলি।’

এ পর্যায়ে আদালত এসি ল্যান্ডকে বলেন, ‘আপনি তো শুধু প্রবীণ আইনজীবীকে রুম থেকে বের করে দেননি, কোর্ট প্রসিডিউর চলাকালীন আরেকটা কোর্ট বসিয়ে শাস্তিও দিয়ে দিলেন। আপনার এত ক্ষমতা?’

এসি ল্যান্ড বলেন, উনি (আইনজীবী) অনেক চেঁচামেচি করেছেন। আমার রুমে আমার তিনটি চেয়ার ছিল। আদালত রুমের স্পেস কত তা জানতে চান। এসিল্যান্ড বলেন, ‘জানি না।’ আদালত বলেন, ‘রুমে অপরপক্ষের আইনজীবী ছিল কি না?’ এসি ল্যান্ড ‘না’-সূচক জবাব দেন।

আদালত এসি ল্যান্ডকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কাউকে এভাবে অপদস্থ করা ঠিক নয়। কোনো আইনজীবী অপরাধ করে থাকলে তার বিচারের জন্য বার কাউন্সিল রয়েছে। আপনি কি কখনো শুনেছেন হাইকোর্ট কোনো আইনজীবীকে সরাসরি সাজা দিয়েছে?’

পরে এসি ল্যান্ড বলেন, ‘সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় আমার ব্যবহারে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

এরপর আদালত এসি ল্যান্ডের কাছে জানতে চান এ ঘটনার জন্য তিনি অনুতপ্ত কি না। এসি ল্যান্ড চুপ থাকলে আদালত বলেন, ‘দেখছি উনার কোনো অনুভুতিই নেই।’ এসি ল্যান্ডের আইনজীবী মামুন মাহবুব এগিয়ে এসে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার কথা আদালতকে জানান। আদালত কঠোরভাবে এসি ল্যান্ডকে সর্তক করে দেন।

এরপর আইনজীবী বিনোদ বিহারী ডায়াসের সামনে আসলে আদালত বলেন, ‘আপনার আরো সহনশীল হওয়া উচিত ছিল আইনজীবী বিনোদ বিহারী।’ পরে আদালত আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।

এদিকে ওই আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় গত ১৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়কে আদালতে তলব করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী, বুধবার বিরোদা রানী রায় আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন