আদালতে খালেদা জিয়া, যুক্তিতর্ক উপস্থান চলছে

  28-12-2017 12:25PM

পিএনএস ডেস্ক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে পঞ্চম দিনের মতো আদালতে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামানের আদালতে চতুর্থ দিন শেষে পঞ্চম দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন তিনি।

এর আগে সকাল ১১টায় খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হয়ে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে ঢাকার বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে পৌঁছান।

বুধবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত শুনানি চলে আদালতে। এসময় খালেদার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন।

আদালতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। খালেদা জিয়াকে চোর বানানোই এই মামলার আসল উদ্দেশ্য।

আব্দুর রেজাক খান বলেছেন, সংবিধানের ৫৫ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো পাবলিক সার্ভেন্ট কোনো মামলার আসামি হতে পারে না। এসময় তিনি দাবি করেন এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ আনতে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধ অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমি সম্মানের সাথে আদালতকে বলেছি, এই মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাস দেয়া হোক।

এর আগে আব্দুর রেজাক খান আদালতে বলেন, ‘খালেদা জিয়া কুয়েতের টাকা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তার প্রমাণশূন্য। শুধু তাই নয়, তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক কোনো প্রমাণও নেই।’

আব্দুর রেজাক খান আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুয়েত থেকে আসা টাকা আত্মসাৎ করেছেন এর কোন প্রমাণ নেই। মামলার কোনো সাক্ষীও এ বিষয় কিছু বলেন নাই।’

তিনি বলেন, ‘মামলার এফআইআর-এ আছে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তা মোটেও ঠিক নয়। আর এফআইআর-এ কথা যে বেদের মত বিশ্বাস করতে হবে তাও ঠিক না।’

এর আগে বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা দিয়ে বেলা ১১টার দিকে বিশেষ আদালতে পৌঁছালে ১১টার পর ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু হয়।

আদালতে উপস্থিত খালেদা জিয়ার যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়েছিল মঙ্গলবার। এর আগে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মত যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।

গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর খালেদার পক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তি উপস্থাপন করেন খালেদার আইনজীবীরা। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।

২১ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান। ওই দিন তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত।

অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন খালেদা জিয়া এবং মামলায় কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন না বলেন তিনি। এরপর আদালত মামলাটির যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন