ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা আমারই ভয় লাগে

  03-01-2018 02:32PM


পিএনএস ডেস্ক: ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) সাজা দেখলে নিজেরই ভয় লাগে বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ থাকতে পারবে না, কিন্তু জেল জরিমানা দিয়ে দেবেন। সাধারণ মানুষের কথা কী বলবো, আমার নিজেরই তো ভয় লাগে। বিনা কারণে কোনো নাগরিককে একদিনও জেলে রাখা সংবিধান সমর্থন করে না।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনের ১৪টি ধারা ও উপ-ধারাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) শুনানিকালে বুধবার তিনি এসব কথা বলেন।

আদালতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আমীর-উল-ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এছাড়া শুনানির সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ জুন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনে ১৪টি ধারা ও উপধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার শুনানি শুরু হলো।

রায়ে বলা হয়, আইনের ওই বিধানের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন ও তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সম্মুখ আঘাত এবং ক্ষমতার পৃথকীকরণের নীতিবিরোধী।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসনিক নির্বাহী। প্রশাসনিক নির্বাহী হিসেবে তারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না। মাসদার হোসেন মামলার রায়ে এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বলা আছে।

এতে আরো বলা হয়, মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯-এর ধারা ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১ ও ১৩ ‘কালারেবল প্রভিশন’। ধারাগুলো সরাসরি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জানা গেছে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এর পর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামরুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়। এর পর আরও দুটি রিট হয়। তিনটি রিটেই ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ৫, ৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পরে রিট আবেদন তিনটি একসঙ্গে শুনানি করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন