শেয়ার কেলেঙ্কারিতে রকিবুরসহ তিনজনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

  10-04-2018 12:06AM

পিএনএস ডেস্ক: ১৯৯৬ সালের আলোচিত শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় বিশেষ ট্রাইবুনাল থেকে খালাস পাওয়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমানসহ তিনজনকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আত্মসমর্পণের নির্দেশ পাওয়া অপর দুইজন হলেন- টি কে গ্রুপের মালিক আবু তৈয়ব এবং বুলবুল সিকিউরিটিজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম শহিদুল হক বুলবুল। তবে, আত্মসমর্পণের পর তাদের জামিন বিবেচনা করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

এই তিন ব্যক্তির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) করা আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে আজ বিএসইসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাসুম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. খুরশীদুল আলম।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খুরশীদুল আলম বলেন, বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল চেয়ে আবেদন করেছিল বিএসইসি। আদালত খালাসপ্রাপ্তদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছেন। রুলে খালাসের ওই রায় কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। এছাড়া ওই মামলার নথিও তলব করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা মামলায় গত বছরের শুরুর দিকে পুঁজিবাজারের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারক এই তিনজনকে খালাস দেন। ওই রায় বাতিল চেয়ে বিএসইসি হাইকোর্টে আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, চিটাগাং সিমেন্টের (বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট) শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে মামলা করে বিএসইসি। এই তিন ব্যক্তির পাশাপাশি কোম্পানিকেও অভিযুক্ত করা হয়। মামলার অন্যতম আসামি রকিবুর রহমান থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিল ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধস উৎঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটি।

তবে বিশেষ ট্রাইবুনালে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩১ মে রকিবুর রহমানসহ তিন আসামিকেই বেকসুর খালাস দেন বিচারক আকবর আলী শেখ। সেই সঙ্গে কোম্পানিকেও খালাস দেয়া হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামিরা ১৯৯৬ সালে চিটাগাং সিমেন্টের পরিচালক ছিলেন। ভারতীয় ও ইরানি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার কিনবে বলে আসামিরা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার মূল্য প্রভাবিত করেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীকালে চিটাগাং সিমেন্টের পক্ষে সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এরপর কোম্পানির একজন পরিচালক বড় অঙ্কের শেয়ার হস্তান্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে কী পরিমাণ ও কোন ব্যক্তি এ কাজ করেছেন তা ৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

এছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রকিবুর রহমান এবং এ এস শহিদুল হক বুলবুল পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুসারে কারসাজি বলে মনে করে গঠিত তদন্ত কমিটি।

শেয়ার কারসাজির ঘটনা উদঘাটনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তিন মাস পর ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত কমিটি সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে চিটাগাং সিমেন্টের শেয়ার কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। আর এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ৪ মে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে মামলা করে বিএসইসি। মামলাটি পরবর্তীকালে বিচারের জন্য প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এই আদালতে থাকাকালীন মামলাটির বাদীর সাক্ষ্য শেষ হয়।

পরে মামলার আদালত পরিবর্তনের নির্দেশ এলে বাদীপক্ষের সম্মতিতে নিম্ন আদালতের আদেশের ওপর স্থগিতাদশে দেন হাইকোর্ট। এরপর বিএসইসির ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন