২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় শেষ দিনে বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে

  04-09-2018 02:30PM

পিএনএস ডেস্ক: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন তার আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

এর আগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে বাবরসহ আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। আজই গ্রেনেড হামলা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ‌১ নম্বর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দীনের আদালতে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।

এ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার ৫১ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন আটজন। তারা হচ্ছেন—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রুহুল আমিন, এএসপি (অব.) আবদুর রশিদ ও এএসপি (অব.) মুন্সি আতিকুর রহমান।

অন্যদিকে কারাগারে রয়েছেন ২৫ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তখনকার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম।

কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা সবাই জঙ্গি সংগঠন হুজির সদস্য বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা হলেন—শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো.আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর আবু হোমায়রা ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবদুল মান্নান,মহিব্বুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মাইন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া এবং আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার।

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী মারা যান।

এ ছাড়া আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, নাসিমা ফেরদৌস, রুমা ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশিদ হয়ে মুন্সি আতিকুর রহমানের কাছে যায়।

অভিযোগ ওঠে, মুন্সি আতিক ও আবদুর রশিদ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজান। তার কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়। মাঝে এফবিআই ও ইন্টারপোল মামলার তদন্ত করে। ২০০৮ সালের ১১ জুন এ মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দেন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি হান্নান ছিলেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাঁদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা। এ ছাড়া ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকা ছিল বলেও বলা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ৩ আগস্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান পুলিশের বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৩ জুলাই তিনি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ওই অভিযোগপত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। মোট ৫২ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান অপর মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৫১ জন।

গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আটজন আসামি। তারা হলেন—হুজি নেতা মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন