জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামল : আদালতে অনাস্থা দুই আসামির

  24-09-2018 04:20PM

পিএনএস ডেস্ক : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দুই আসামি আদালতে অনাস্থা দিয়েছেন। লিখিত আবেদন দিয়ে তাঁরা আদালতকে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তাঁকে আদালত হাজির না করা হলে এ মামলার কার্যক্রম চলতে পারে না। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশ আইনসংগত হবে না। এ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন না। এ আবেদনের পর আদালত এক আসামির জামিন বাতিল করে মামলার শুনানির জন্য কাল মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছেন।

আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫–এর বিচারক আখতারুজ্জামান এই আদেশ দেন। আদালতের প্রতি অনাস্থা দেওয়া দুই আসামি হলেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে জিয়াউলকে। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

আজ শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। খালেদা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি চান এই দুই আইনজীবী। তাঁরা আদালতকে জানান, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চালানোর আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।

অন্যদিকে, জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে বিচার চলার যে আদেশ হয়েছে, তা আইনসিদ্ধ হয়নি। এই আদেশের বিরুদ্ধেও তাঁর মক্কেল উচ্চ আদালতে বিবিধ আবেদন করবেন। সে কারণে তিনি সময় চান।

তখন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, এ মামলায় আজ জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলামের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন রয়েছে। তাঁরা যদি যুক্তিতর্ক না করেন, তাহলে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করার জন্য তিনি আবেদন করছেন। কারণ, মূল আইনে যুক্তিতর্ক করতে হবে—এমন বিধান নেই। এ মামলার বিচারকে বিলম্বিত করছে আসামিপক্ষ।

একপর্যায়ে জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবীর লিখিত আবেদন দিয়ে বলেন, এ আদালতের প্রতি তাঁদের আস্থা নেই। এ কারণে মামলাটি অন্য আদালতে হস্তান্তর চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। এ জন্য ২০ কার্যদিবস শুনানি মুলতবি চান। আবেদনে বলা হয়েছে, এ আদালত প্রকাশ্য আদালত নন। আসামি জেলে থাকলে তাঁর ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আদালতে উপস্থিত থাকা বা না থাকা নির্ভর করে না।

উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত জিয়াউল ইসলামের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়া ও মনিরুল ইসলামের জামিন বহাল রাখেন। কারাবিধি অনুযায়ী খালেদাকে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আদালত আগামীকাল যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেন। আদালতের প্রতি অনাস্থা চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে আগামীকাল আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করেন বিচারক।

পরপর তিনটি শুনানির তারিখে খালেদা না আসায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে আদেশ দেন আদালত। আইন ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আদালত সেদিন আদেশে বলেন, এক বা একাধিক আসামি যদি অনুপস্থিত থাকে, সে ক্ষেত্রে যদি কোনো পক্ষ আবেদন নাও করে, তাহলেও আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিতে পারেন। খালেদা জিয়া না আসায় বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। এ মামলা ১ বছর ৯ মাস ধরে যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। খালেদা জিয়া না আসায় যুক্তিতর্ক শুনানি হচ্ছে না।

অবশ্য খালেদার আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি দেখাচ্ছেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে ইচ্ছুক। অসুস্থতার কারণে তিনি আদালতে আসতে পারছেন না। তিনি সুস্থ হলে অবশ্যই আদালতে আসবেন।

নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন খালেদা জিয়া।

আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করেন। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে আদালত বসেন। কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আদালতকে বলেছিলেন, এ আদালতে ন্যায়বিচার নেই। তিনি অসুস্থ। তিনি আর আদালতে আসবেন না। যত দিন ইচ্ছা আদালত তাঁকে সাজা দিতে পারেন। এরপর এ মামলায় চার দিন শুনানি হলেও খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি। কারাগার কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাননি। অবশ্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা কারাগারে খালেদার সঙ্গে দেখা করে আদালতকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চান। কারা কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছেন, তা ঠিক নয়।

এর আগে এ মামলার বিচার চলছিল পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলায় দুদক তাঁর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছে। খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির যুক্তিতর্ক শুনানি বাকি রয়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার অপর আসামিরা হলেন হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খান।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন