জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

  28-01-2019 05:08PM

পিএনএস ডেস্ক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর ১৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল খারিজ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

ওই দিন আদালত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেন, ‘তিনটি আপিল (খালেদা জিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ) খারিজ করা হল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা রিভিশন আবেদনের রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করা হল। খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড করা হল। এ রায়ের ফলে সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রইল।’

খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন বিষয়টিকে আমলে নিয়েছেন- তা সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ করা হয়নি।

তবে রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া ছিলেন এ মামলার মুখ্য আসামি। অন্য আসামিদের যেখানে ১০ বছরের সাজা হয়েছে, মুখ্য আসামি তার চেয়ে কম সাজা পেতে পারেন না। এ কারণে হাইকোর্টের রায়ে সব আসামির সাজা সমান করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘খালেদা জিয়া ছিলেন এই মামলার মুখ্য আসামি। সেই গ্রাউন্ডে তার সাজা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। ফলে মামলায় সব আসামির সাজাই ১০ বছর হল।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

একই মামলায় তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জারিমানা করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ কারাগারে আছেন। আর পলাতক আছেন তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড আসে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ কারণে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তাহার সরকারি কর্মচারীজনিত ক্ষমতার বা একজন ব্যাংকার, বণিক, আড়তদার, দালাল, অ্যাটর্নি বা প্রতিভূ হিসাবে তাহার ব্যবসায় ব্যাপদেশে যে কোনো প্রকারে কোনো সম্পত্তি বা কোনো সম্পত্তির ওপর আধিপত্যের ভারপ্রাপ্ত হইয়া সম্পত্তি সম্পর্কে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।’

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারিক আদালত বলেন, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।

বাকি পাঁচ আসামিকে এই ধারার সর্বোচ্চ সাজা দিলেও প্রধান আসামীকে কম দণ্ড দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে রায়ের দিন বিচারক বলেন, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও বয়স ও সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ওই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পর্যায়ক্রমে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ছাড়াও কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ খালাস চেয়ে পৃথক আপিল করেন।

এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি আপিলের আবেদনগুলো শুনানির জন্য গ্রহণ করে খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড স্থগিত করেন আদালত। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ বাড়াতে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন আবেদন করে একই বছরের ২৫ মার্চ।

দুদকের যুক্তি ছিল, আদালত মুখ্য আসামিকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে সহযোগী আসামীদের দিয়েছেন ১০ বছরের সাজা- এটা সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য। সেই আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ ২৮ মার্চ রুল জারি করেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তবে আদালত বলে দেন, রুলের ওপর শুনানি হবে খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গে।

গত বছরের ১২ জুলাই এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হওয়ার পর ২৮ কার্যদিবসের মধ্যে ২৬ কার্যদিবস খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।

এরপর গত বছরের ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেন। শুনানিতে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চাওয়া হয় দুদকের পক্ষ থেকে।

আর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজা বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেন। এর মধ্যেই গত ২২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলার অর্থের উৎসের বিষয়টি স্পষ্ট করতে অতিরিক্ত সাক্ষ্য চেয়ে আবেদন করেন।

বিষয়টি নিয়ে তারা আপিল বিভাগেও যান। সেই সঙ্গে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তির সময় চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ গত ২৯ অক্টোবর সময়ের আবেদন খারিজ করে দিলে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ মামলার আপিল শুনানি শেষ করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।

এরপর হাইকোর্ট ২৯ অক্টোবর অতিরিক্ত সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদনটি খারিজ করে দেন এবং রায়ের জন্য ৩০ অক্টোবরের দিন ধার্য করেন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন