‘দেশে বিচারাধীন মামলা ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০টি’

  11-03-2019 09:41PM

পিএনএস ডেস্ক : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশের উচ্চ আদালত ও অধীনস্থ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০টি। যার মধ্যে আপিল বিভাগ ২০ হাজার ৪৪২টি ও হাইকোর্ট বিভাগে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৫২টি। আর অধস্তন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫২টি মামলা।

এসব মামলার মধ্যে ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭টি ও দেওয়ানী মামলার সংখ্যা ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৬১টি। সরকার এই মামলা জট কমানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।

সোমবার টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মো. শামসুল হক টুকুর তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে এসব তথ্য জানান। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের মুলতবি অধিবেশনের সমাপনী অধিবেশন বিকালে শুরু হয়।

আনিসুল হক বলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ সারাদেশের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বিচারিক সার্ভিস কমিশনকে গতিশীল করা হয়েছে যাতে শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায়। অধস্তন আদালতের বিচারকের কোন পদ শূন্য না রাখার সরকারের যে প্রত্যয় রয়েছে সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন আইন ও বিচার বিভাগের চাহিদামতে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও বাছাইকৃত নামের তালিকা নিয়োগের নিমিত্তে সুপারিশ করে আসছে। এর আলোকে ২০১৪ সালে অধস্তন আদালতে ৫৭১ জন সহকারি জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ১২তম বিজেএস পরীক্ষা চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে এ কার্যক্রমের অংশহিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ৯৯জনকে উত্তীর্ণ করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ করা হবে। এরপর আরো ১০০জন সহকারী জজ নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ শুরু হবে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারাদেশে আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল সৃজন করেছে। নতুন সৃজিত ও ট্রাইবুনালসহ মোট ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধীন দায়েরকৃত মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তাছাড়া ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেন ট্রাইবুন্যাল সৃজন করা হয়েছে যার মাধ্যমে সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর অধীনে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। উক্ত ট্রাইব্যুনালের জন্য ২৪০টি সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃজন হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া ৭টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ১২২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ১৫৯টি যুগ্ম-জেলা জজ আদালত, ১৯টি পরিবেশ আদালত, ৬টি পরিবেশ আপিল আদালত, ৩৪৬টি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর পদ সৃজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য জন-প্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া গেছে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এজলাস সংকট হ্রাসক্রমে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সম্প্রসারণ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নতুন ১২তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।

তাছাড়া অধস্তন আদালতের ৪২ জেলায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ২৪ নতুন জেলায় ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও বাকি ২২টি জেলায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে। সরকার ২৮টি জেলায় বিদ্যমান জেলা জজ আদালত ভবনসমূহ ৩-৪ তলা পর্যন্ত উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করেছে এবং ৩৬টি জেলা জজ আদালত ভবন উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

মন্ত্রী বলেন, বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি সরকার বর্তমানে মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। পুরাতন মামলাগুলি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রত্যেক আদালতে সাক্ষীর সমন জারি নিশ্চিতপূর্বক সাক্ষীগণকে হাজির দ্রুততম সময়ে সাধ্য গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চার্জশীটে ডাক্তার ও তদন্তকারী কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজতর হয়। পুরাতন মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সলিসিউটরের নেতৃত্বে মনিটরিং সেল কাজ করছে।

তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের দক্ষতা সঙ্গে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অষ্ট্রেলিয়ায় সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৫৪০ জন বিচারককে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে ২৫৩ জন বিচারক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।

এছাড়া ভারতের ভূপালে ৩১৫ জন বিচারক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। জাপানের জাইকার অর্থায়নে ৩০ জন এবং চীনে ২০ জন বিচারক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ জন বিচারক ও প্রসিকিউটর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে আরো অধিক সংখ্যক বিচারককে দেশে-বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, এভাবে যুগোপযোগী পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্ত্রি লাঘবের জন্য আধুনিক বিচার বিভাগ ও বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ আধুনিক হলে সারাদেশের বিচারাধীন মামলার সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে এবং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর ও দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন