আলোচিত নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু

  20-06-2019 08:38PM

পিএনএস ডেস্ক : ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২৭ জুন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। তাঁর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে বাদী পক্ষের ও আসামি পক্ষের আইনজীবী ছাড়া মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান এবং অভিযুক্ত ১৬ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে এই মামলার শুনানি চলাকালে আইনজীবী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী বা অন্য কাউকে উপস্থিত না থাকতে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়।

আদালতে শুনানির শুরুতে আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিনসহ অন্যরা অভিযোগ করেন, আসামিরা সবাই মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পায়নি এবং সবাই আইনজীবীও নিয়োগ করতে পারেনি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও তাদের কোনো আইনজীবী দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য সময় চেয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানি না করার জন্য আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করেন।

এ নিয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন চলে। এ সময় আসামিরা কাঠগড়া থেকে আদালতের উদ্দেশে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু কথা বলার ও শোনার অনুরোধ জানান। আদালত তাদের কথা বলার সুযোগ দেন। আসামিরাও তাদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিসহ তাদের আপত্তির কথা আদালতকে জানান। আদালত তাদের বক্তব্য শোনে তাৎক্ষণিক আসামিদের সবাইকে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ১৬ জন আসামির পক্ষে জামিনের আবেদন জানিয়ে ওই ১৬ জনকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

জামিনের আবেদন করা আসামিরা হলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন, মাদ্রাসার প্রভাষক আফছার উদ্দিন, ছাত্র মো. শামীম, সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, আবদুর রহিম শরীফ, মহিউদ্দিন শাকিল, ইমরান হোসেন মামুন, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন্নাহার মনি, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, আবদুল কাদের, নূর উদ্দিন, ইফতেখার উদ্দিন ওরফে রানা, সাইফুর রহমান, মো. জুবায়ের ও শাহাদাত হোসেন শামীম।

রাষ্ট্রপক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সরকারি কৌঁসুলি হাফেজ আহম্মদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আক্রামুজ্জামান, এম শাহ জাহানসহ অন্যরা। তাঁরা আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে মামলার এজাহার, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দাবি জানান।

আদালত আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং মামলার অভিযোগ থেকে ১৬ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন খারিজ করে আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে নেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান জানান, আগামী ২৭ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, নুসরাতের দুই সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে হাজির করা হয়। মামলার অভিযোগপত্র দাখিল না হওয়ায় আগামী ৪ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে গত ২৮ মে ফেনীর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ৩০ মে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি না করে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। ১০ জুন মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শুরু করা হয়।

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান ওরফে রাফিকে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।

পুলিশ ও পিবিআই এই মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে গত ২৭ মার্চ নিজ কক্ষে ডেকে নুসরাতকে শ্লীলতাহানির করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা তুলে না নেওয়ার কারণে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নুসরাতকে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন