চালকদের মাসিক বেতনে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

  15-09-2019 09:28PM

পিএনএস ডেস্ক : গণপরিবহনে দৈনিক মজুরি কিংবা ট্রিপ ভিত্তিতে চালক নিয়োগ নিষিদ্ধ করে চালকদের মাসিক বেতনে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে যেসব স্থানে গাড়ি ও চালকের কাগজপত্র তল্লাশি করা হয় সেখানে সংশ্লিষ্ট চালকরা মাদকাসক্ত কিনা সে পরীক্ষার (ডোপ টেস্ট) নির্দেশনার পাশাপাশি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার কিংবা তা নবায়নের আগে ব্যক্তির ডোপ টেস্ট ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রথমে হাত পরে প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রুলের রায়ে এসব নির্দেশনা দেয় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

২০ জুন এ রায় ঘোষণা করে আদালত। এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিষয়টি রবিবার নিশ্চিত করেন রাজীবের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের জন্য রিটকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

রায়ে বলা হয়েছে, রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজীবের দুই ভাই মেহেদী হাসান হৃদয় ও আব্দুল্লাহ বাপ্পীকে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি দেবে ২৫ লাখ। আর স্বজন পরিবহন দেবে ২৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ কিছু নির্দেশনা এসেছে হাইকোর্টের রায়ে।

রায়ের বলা হয়েছে, সব মহাসড়ক ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে যাতে তদন্ত কার্যক্রম ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহায়তা পাওয়া যায়। চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধে সব মহানগরের সড়কগুলোতে চলাচলকারী সব গণপরিবহনকে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতির মাধ্যমে একটি কোম্পানির আওতায় এনে বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সড়কে পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এসব নির্দেশনা রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে।

পাশাপাশি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা নামা না করে নির্দিষ্ট স্টপেজে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা, যেখানে-সেখানে হর্ন বাজানো থেকে চালকদের বিরত রাখা, চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংরক্ষিত এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানের হর্ন না বাজানোর নির্দেশনা রয়েছে রায়ে। অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘এই রায়ে রাজীবের দুই ভাই শুধু ক্ষতিপূরণ পেল না গণপরিবহন নিয়ে কিছু দিক নির্দেশনাও পাওয়া গিয়েছে যা যুগান্তকারী। চলমান যে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়কে বিশৃঙ্খলা তাতে হাইকোর্টের এই রায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের বাসের রেষারেষিতে রাজীবের ডান হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরদিন ৪ এপ্রিল রাজীবের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ এপ্রিল মৃত্যুর কাছে হার মানেন রাজীব।

রিটের শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে নির্দেশের পাশাপাশি রুল জারি করে হাইকোর্ট।
রুলে সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

গত বছরের ২২ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ওই ঘটনার দায় নিরূপণ করতে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় আদালত। কমিটি রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় বিআরটিসি ও স্বজনকে দায়ী করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়।

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন