আবরার হত্যার বিচার চান আসামি মুন্নার মা, তবে…

  09-10-2019 07:48AM



পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবি করেছেন নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের আসামি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার মা কুলসুমা আক্তার শেলি। তবে নিজের ছেলে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

অথচ ঘটনার পরই পুলিশের হাতে আটক হন মুন্না। তিনি এ মামলার ৯ নম্বর আসামি। মুন্না জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ঘরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা মহিবুর রহমান জিতু ফেসবুকে লিখেছেন, বুয়েটে প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ড. এমএ রশিদ চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। তাকে নিয়ে উপজেলাবাসী গর্বিত। আর এখন ফাহাদ হত্যার আসামি মুন্না একই উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় তারা লজ্জিত।

মুন্নার মা কুলসুমা আক্তার শেলি দাবি করেন, তার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার রাতে মুন্না গ্রামের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার ঘরগাঁও গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১১টায় মুন্না বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।

তিনি বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে সন্দেহজনকভাবে। আমার ছেলে এমন বর্বর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। আজ আবরারের স্থলে আমার ছেলে মারা গেলেও আমি পুত্রহারা হতাম। আমি এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করছি।

মঙ্গলবার মুন্নার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাবা প্রয়াত আহাদ আলী মেম্বর ছিলেন বিএনপির একজন কর্মী। তারা পারিবারিকভাবে বিএনপির সমর্থক। এ পরিবারের সন্তান ইশতিয়াক মুন্না বুয়েটে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা বনে যান। আবরার হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার বিষয়টি গ্রামের বাড়িতে জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই তাকে চুনারুঘাটের কলঙ্ক বলে আখ্যায়িত করেছেন।

কুলসুমা আক্তার শনিবার বিকেলে তার ৩ ছেলেকে নিয়ে গ্রামে পীর মোর্শেদ কামালের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে বেড়াতে যান। মুন্নার মা জানান, রোববার রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১১টায় বুয়েটের ইশতিয়াক মুন্না বাসযোগে ঢাকায় চলে যান। সোমবার সকালে ছেলের ফোন না পেয়ে মা কুলসুমা ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পান। এরপরই মুন্নার এক বন্ধু তার মাকে জানায় মুন্নার হলে (শেরেবাংলা হল) সমস্যা হয়েছে। মুন্না সমস্যায় আছে, এ কথা বলেই সে ফোন কেটে দেয়।

পরে কুলসুমা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার ছেলে প্রথমে চকবাজার পুলিশ ও পরে ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি জানান, নিহত আবরারের বাবা যে মামলা করেছেন তাতে তার ছেলে মুন্নার নাম নেই। এ ছাড়া যে ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে তাতেও মুন্নার ছবি নেই। সে ছাত্রলীগ করত আমি জানি।

এ বিষয়ে মুন্নার চাচা ওয়াহেদ আলী জানান, মুন্না রোববার বাড়িতে এসেছিল। রাতে ঢাকা যাওয়ার সময় আমার সঙ্গে বিদায় নিয়ে গেছে। একই গ্রামের ডা. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ইশতিয়াক মুন্নারা ৩ ভাই। সবাই মেধাবী। মুন্না গ্রামের ঘরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ২০০৮ সালে তারা বাবা মারা যান।

পরে বি.বাড়িয়া জেলায় মায়ের কাছে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক লেখাপড়া করেন। পরে বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান। বড় ভাই আশরাফ আহমেদ মনির সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগদান করে এখন ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ভাই ইফতেখার আহমেদ রানা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। তার মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের পর সেখানে ৫ বছরের একটি সন্তান রয়েছে।

শেষ খবরে জানা গেছে, ইশতিয়াক মুন্নাকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। এ বিষয়ে চুনারুঘাট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান, প্রয়াত আহাদ আলী বিএনপি করতেন। তার পরিবারও বিএনপি সমর্থক। কিন্তু মুন্না কিভাবে ছাত্রলীগ হয়ে গেল তা বোধগম্য নয়।

পিএনএস/ হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন