রহস্যময় নাম্বার ‘৬১৭৪’!

  04-09-2019 12:39AM

পিএনএস ডেস্ক: ৬১৭৪ সংখ্যাটি প্রথম দেখায় খুব বেশি কিছু হয়তো মনে হবে না, কিন্তু এটাই গণিতবিদ ও সংখ্যা বা নাম্বার নিয়ে উৎসাহীদের আকর্ষণ করে আসছে সেই ১৯৪৯ সাল থেকে।

কেন?
এ তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে। চলুন নিজেরাও পরীক্ষা করে দেখি:

১। চার অংকের একটি সংখ্যা নিন যেখানে অন্তত দুটি ভিন্ন ডিজিট থাকবে (শূন্য সহ)। যেমন ধরুন ১২৩৪।

২। এগুলো উল্টো (বড় থেকে ছোটো) করে সাজান: যেমন- ৪৩২১

৩। এখন ক্রমানুসারে করে সাজান: ১২৩৪

৪। এবার বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যা বিয়োগ দিন: ৪৩২১-১২৩৪

৫। এখন বিয়োগের ফল নিয়ে স্টেপ ২,৩ ও ৪ পুনরাবৃত্তি করুন

চলুন এক সাথে করি

৪৩২১-১২৩৪=৩০৮৭

বড় থেকে ছোটো করে সাজান: ৮৭৩০

ক্রমানুসারে :০৩৭৮

বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যা বিয়োগ দিন: ৮৭৩০-০৩৭৮= ৮৩৫২

এখন বিয়োগের ফল নিয়ে আগের তিনটি ধাপ পুনরাবৃত্তি করুন

এখন যে সংখ্যা নিয়ে কাজ চলছে তা হলো ৮৩৫২

৮৫৩২-২৩৫৮= ৬১৭৪

এবং ৬১৭৪ নিয়ে পুনরাবৃত্তি করুণ- এর ডিজিট গুলো বড় থেকে ছোটো ও ছোটো থেকে বড়ো করে , এবং বিয়োগ করে

৭৬৪১-১৪৬৭=৬১৭৪

দেখতেই পাচ্ছেন প্রতিবার একই কাজে আপনি একই ফলাফল পাচ্ছেন: ৬১৭৪

আচ্ছা, আপনি হয়তো ভাবছেন এটা কাকতাল। তাহলে অন্য যে কোনো সংখ্যা নিয়ে চেষ্টা করুন। ২০০৫ কেমন হয়?

৫২০০-০০২৫ = ৫১৭৫

৭৫৫১-১৫৫৭= ৫৯৯৪

৯৯৫৪-৪৫৯৯= ৫৩৫৫

৫৫৫৩-৩৫৫৫= ১৯৯৮

৯৯৮১-১৮৯৯= ৮০৮২

৮৮২০-০২৮৮= ৮৫৩২

৮৫৩২-২৩৫৮= ৬১৭৪

৭৬৪১-১৪৬৭= ৬১৭৪

কোন চারটি সংখ্যা বা নাম্বার আপনি নিলেন সেটি কোনো ব্যাপার না, যখনই আপনি ৬১৭৪ এ পৌঁছবেন তারপর থেকে একই কাজে আপনি এই ফলই পাবেন।

কাপরেকার’স কন্সট্যান্ট

ভারতীয় গণিতবিদ দত্তত্রেয়া রামচন্দ্র কাপরেকার (১৯০৫-১৯৮৬) সংখ্যা নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন। ড. আর কাপরেকার ১৯৪৯ সালে মাদ্রাজে এক গণিত সম্মেলনে বিশ্বকে তার উদ্ভাবন সম্পর্কে জানিয়েছেন।

তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন এবং মুম্বাইয়ের উত্তরের পাহাড়ি এলাকা দেবলালি শহরে স্কুল শিক্ষক হিসেবে জীবন কাটিয়েছেন। তার অনেক আবিষ্কারই ভারতীয় গণিতবিদদের অনেকে উড়িয়ে দিয়েছেন, যারা তার কাজকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করতেন। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন চিন্তাশীল লেখক, বিশেষ করে জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনাগুলোতে।

তিনি প্রায়শই নানা সম্মেলন বা স্কুল কলেজে তার উদ্ভট মেথড এবং আগ্রহ উদ্দীপক সংখ্যা পর্যবেক্ষণ নিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রিত হতেন।

শেষ হাসি...

ধীরে ধীরে কাপরেকারের ধারণা দেশে বিদেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করে সত্তরের দশকে। আমেরিকান বেস্ট সেলার লেখক ও গণিত ভক্ত মার্টিন গার্ডনার জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকাতে তাকে নিয়ে লেখেন। এখন কাপরেকার ও তার আবিষ্কারগুলো স্বীকৃত এবং বিশ্বজুড়ে গণিতবিদদের দ্বারা সমাদৃত। বিশেষ করে তাদের কাছে যারা সংখ্যা নিয়ে খেলা থেকে বিরত থাকতে পারেননা।

ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ইয়ুতাকা নিশিয়ামা বলছেন, ‘৬১৭৪ সংখ্যাটি সত্যিই এক রহস্যময় নাম্বার’।

একটি অনলাইন ম্যাগাজিনে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি কিভাবে কম্পিউটারের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে সব চারটি ডিজিটই শেষ পর্যন্ত ৬১৭৪ এ পৌঁছায় কি না।

তিনিও দেখেছেন যে, প্রতি চারটি নাম্বার (যেখানে ডিজিটগুলো একই নয়) কারপেকারের পদ্ধতিতে সাতটি ধাপে গিয়ে ৬১৭৪-এই পৌঁছায়।

নিশিয়ামার মতে, কারপেকারের সাত ধাপে যদি আপনি ৬১৭৪ এ না পৌঁছান তাহলে বুঝবেন আপনার কোথাও ভুল হয়েছে। তাহলে আবার চেষ্টা করুন।

ম্যাজিক নাম্বার

এমন আর কয়টি বিশেষ সংখ্যা আছে ... এর উত্তর হল আমরা নিশ্চিত করে জানিনা। কিন্তু আমরা জানি তিন ডিজিট নিয়ে একই ধরণের কাপরেকার কনস্ট্যান্ট আছে।

সেগুলো দেখা যাক

আমরা যে কোনো তিনটি ডিজিট নিয়ে শুরু করতে পারি, যেমন ৫৭৪:

৭৫৪-৪৫৭= ২৯৭

৯৭২-২৭৯= ৬৯৩

৯৬৩-৩৬৯= ৫৯৪

৯৫৪-৪৫৯= ৪৯৫

৯৫৪-৪৫৯= ৪৯৫

তাহলে এখানে একটি ম্যাজিক নাম্বার পাওয়া গেলো এবং তা হলও ৪৯৫

গণিতবিদরা বলছেন, এই ফ্যাক্টরটি কাজ করে তিন বা চার ডিজিটের ক্ষেত্রে কিন্তু তারা শুধু খেলেছেন দুই থেকে দশ ডিজিট নিয়ে।

৬১৭৪ যখন টেকনিকালারে

সিগ্রাম টেকনোলজিস ফাউন্ডেশন মুম্বাই ভিত্তিক একটি ভারতীয় কোম্পানি এবং তারা গ্রামীণ ও আদিবাসী স্কুলগুলোর জন্য আইটি লার্নিং প্লাটফরম প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা সিদ্ধান্ত নিলো নিয়ে ৬১৭৪ সংখ্যা দিয়ে তারা ডিজিট ও কালার নিয়ে খেলবে।

এর প্রতিষ্ঠাতা গিরিশ আরাবেইল বলেন, অংক অপছন্দ করে এমন শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতেই তারা এর মজাটি দেখাতে চেয়েছেন।

কাপরেকার ধারাবাহিক চমৎকার একটি সৌন্দর্য, যোগ করেন আরাবেইল।



তিনি বলেন, আপনি যখন ধাপগুলো অনুসরণ করবেন, এটা আপনাকে দারুণ মুহূর্তের দিকে নিয়ে যাবে। প্রচলিত গণিত সিলেবাসে যেটা সচরাচর পাওয়া যায়না।
আরবেইলের দল পরে ৬১৭৪ এ পৌঁছানোর জন্য কালার কোড সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা ম্যাজিক নাম্বারে পৌছাঁতে সাত ধাপের বেশি সময় নেয়না।

কম্পিউটারে বিশেষ ভাষা অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা এটির ব্যখ্যা করতে পারে। এবং প্রচলিত প্রায় দশ হাজার চার ডিজিটি সংখ্যা দিয়ে প্রোগ্রাম চালাতে পারে। বহু রংয়ের গ্রিড ব্যবহার করে ম্যাজিক নাম্বারে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আনন্দময় গণিত

‘কাপরেকার কনস্ট্যান্ট’ গণিতকে আনন্দময় করতে তার একমাত্র অবদান নয়।

আপনি হয়তো শুনে থাকবেন কারপেকার নাম্বার: একটি ইতিবাচক সংখ্যা স্কয়ার করলে পরে তাকে দু ভাগে আলাদা করতে তার ফল আসে মূল সংখ্যাটাই।

যেমন:

২৯৭²= ৮৮,২০৯

৮৮+২০৯= ২৯৭

কাপরেকার সংখ্যার আরেকটি ভালো উদাহরণ হলো- ৯, ৪৫, ৫৫, ৯৯, ৭০৩, ৯৯৯, ২,২২৩, ১৭, ৩৪৪, ৫৩৮, ৪৬১... এভাবে চেষ্টা করুন নিজে এবং দেখুন কি হয়।

মনে রাখবেন আপনি যখন রেজাল্টিং নাম্বারকে ভাগ করবেন তখন এক ডিজিটের সাথে এক ডিজিট এবং দুই ডিজিটের সাথে দুই ডিজিট নেয়ার চেষ্টা করবেন। আর যদিও দু ভাগে ভাগ না করা যায় (যেমন ৮৮,২০৯) তাহলে প্রথমে দুটি ডিজিট ও পরে তিনটি ডিজিট নিবেন এবং এতকিছুর পর নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন আপনি যা করছেন তাই কাপরেকার অপারেশন কি-না।

এখন আসলে আপনি নিজেই আনন্দময় গণিতের একজন বিশেষজ্ঞ।


পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন