রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু মঙ্গলবার

  21-01-2018 09:05PM

পিএনএস : রাখাইনে সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে আগামী মঙ্গলবার প্রথম দফায় একদল রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরবে বলে শনিবার গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে আগামী মঙ্গলবার প্রথম দফায় একদল রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরবে। রোহিঙ্গাদের গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউ নি পু নেতৃত্বে মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে এবং তাউয়ং পিও লেতভে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে থাকার ঘর, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত করতে শেষ মুহূর্তের কাজ সম্পন্ন করতে তাগাদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিনিধি দলে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর বিষয়ক উপমন্ত্রী উ খিন মং তিন এবং সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উ সোয়ে অংসহ অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন।

গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলছে, মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে মিয়ানমার। যেদিন যাদের পাঠানো হবে, তাদের তালিকা আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে স্থল পথ দিয়ে যেসব রোহিঙ্গা যাবে তাদের প্রাথমিকভাবে তাউয়ং পিও লেতভে সেন্টারে রাখা হবে। আর নদীপথে যারা যাবে তাদের নেওয়া হবে নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করবেন, যেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা হবে। নিজের এলাকা বা তার কাছাকাছি জায়গায় যাওয়ার আগে এই ক্যাম্পে থাকবেন বাংলাদেশফেরত রোহিঙ্গারা।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং তাদেরকে অবশ্যই তাদের আদি বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদেরকে কোনো আশ্রয়শিবিরে রাখা যাবে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির থেকে এসব মানুষকে (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারের শিবিরে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন শুরুর বিরোধিতা করেছে। তাদের ভাষায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত। এই অবস্থায় তাদের ফেরত পাঠানো সময়োচিত হবে না।

এছাড়া, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। শুক্রবার কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মিয়ানমারে তাদের ফেরত না পাঠাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনী দমন অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফেরতে গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে চলতি সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউ নি পু নেতৃত্বে মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে এবং তাউয়ং পিও লেতভে ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে থাকার ঘর, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত করতে শেষ মুহূর্তের কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রতিনিধি দলে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর বিষয়ক উপমন্ত্রী উ খিন মং তিন এবং সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উ সোয়ে অংসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ছিলেন।

কর্মকর্তাদের মংডু শহরের নিকটবর্তী তাউয়ং পিও লেতভে ক্যাম্প পরিদর্শনের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রের ওই প্রতিবেদনে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা প্রাঙ্গণে কাঠের তৈরি বড় ঘর দেখা গেছে ওই ছবিতে।

মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে চার মাসে পালিয়ে এসেছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে চার মাসে পালিয়ে এসেছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অধিকাংশই আছে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে।

এই রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফেরতে গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে আগামী সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার বলছে, মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে মিয়ানমার। যেদিন যাদের পাঠানো হবে, তাদের তালিকা আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ থেকে স্থল পথ দিয়ে যেসব রোহিঙ্গা যাবে তাদের প্রাথমিকভাবে তাউয়ং পিও লেতভে সেন্টারে রাখা হবে। আর নদীপথে যারা যাবে তাদের নেওয়া হবে নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করবেন, যেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা হবে। নিজের এলাকা বা তার কাছাকাছি জায়গায় যাওয়ার আগে এই ক্যাম্পে থাকবেন বাংলাদেশফেরত রোহিঙ্গারা।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামে ফিরতে পারবে, নাকি তাদের ক্যাম্পেই থাকতে হবে- সে বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন শুরুর বিরোধিতা করেছে। তাদের ভাষায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত। এই অবস্থায় তাদের ফেরত পাঠানো সময়োচিত হবে না।

রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ১৬ জানুয়ারি নাইপিদোতে চুক্তিতে সই করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ১৬ জানুয়ারি নাইপিদোতে চুক্তিতে সই করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ সপ্তাহেও রোহিঙ্গাদের ছবিসহ একটি তালিকা প্রকাশ করে বলেছে, এরা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য। রোহিঙ্গাদের ওই বিদ্রোহী দলটিকেই ২৫ অগাস্টের হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

ওই হামলার পর সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের নামে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে যে অভিযান শুরু করেছিল, জাতিসংঘ তাকে চিহ্নিত করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এতদিন হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে এলেও সম্প্রতি দেশটির সেনাপ্রধান এক বিবৃতিতে ১০ রোহিঙ্গাকে ধরার পর হত্যার কথা স্বীকার করে নেন।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিরোধিতা করে আরসা এক টুইটে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কখনও তাদের নিজের গ্রাম বা পিতৃভূমিতে ফিরতে পারবে না। “বরং তাদের বাকি জীবনের পাশাপাশি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জীবনও এসব কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কাটবে।”

বাংলাদেদেশের কুতুপালং ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নেতারাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে নাগরিকত্বের অধিকার, ভূমি ফিরে পাওয়া এবং হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের বিচারসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে সামনে আসার পরিকল্পনা করছেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শুক্রবার বার্তা সংস্থাটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয়জন রোহিঙ্গা নেতা বার্মিজ ভাষায় হাতে লেখা একটি স্মারকলিপির খসড়া তৈরি করেছেন; সেখানেই ওই দাবিগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ৪০টি গ্রামের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা। তাদের স্মারকলিপি চূড়ান্ত হলেই তা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে তা তুলে ধরা হবে।

ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার সরকার যতক্ষণ না এসব দাবি পূরণ করছে, ততক্ষণ আশ্রয় শিবির থেকে কোনো রোহিঙ্গা মুসলমান ফিরে যাবে না।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে-
>> দীর্ঘদিন নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে সরকারি ঘোষণা দিতে হবে। মিয়ানমারের স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠীর তালিকাতেও রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে।

>> যে ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে, সেই ভূমি, বাড়িঘর, মসজিদ আর স্কুল তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।

>> সেনা অভিযানের নামে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

>> সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে যেসব ‘নিরপরাধ’ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।

>> মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এবং ফেইসবুক পেইজগুলোতে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ছবিসহ যে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে- তা বন্ধ করতে হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন