পাটের পাতা থেকে ‘সবুজ চা’

  23-01-2018 01:16PM


পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশে পাটের পাতা থেকে ‘সবুজ চা’ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে তা রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিতে। তবে বড় পরিসরে উৎপাদন শুরু করতে আরো সময় লাগবে। সেজন্য জামালপুরে একটি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে পাট ‘সোনালি আঁশ’ হিসেবে পরিচিত। এক সময় পাটই ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের প্রধান পণ্য। পাটের আঁশের সেই সোনালি অতীত না থাকলেও পাটের পাতা তৈরি করেছে এক নতুন সম্ভাবনা।

পাট পাতা শাক হিসেবে খাবার প্রচলন বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এই পাট পাতা থেকে ‘চা’ অর্থাৎ এক ধরনের পানীয় উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখন ছোট অল্প করে এই উৎপাদন চললেও বড় আঙ্গিকে উৎপাদনের জন্য কারাখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে পাট পাতা থেকে এই অর্গ্যানিক চা উৎপাদনে সাফল্য লাভের প্রথম দাবি করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট। এরপর ঢাকায় গুয়ার্ছি অ্যাকুয়া অ্যাগ্রো টেক নামক একটি প্রতিষ্ঠান পাটের পাতা দিয়ে তৈরি অর্গ্যানিক চা জার্মানিতে রপ্তানি শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইসমাইল হোসেন খান। এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে গেছে। আর ইসমাইল হোসেন খানকে করা হয়েছে সরকারে নতুন পাট পাতা থেকে চা তৈরি প্রকল্পের উপদেষ্টা।

শুক্রবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী এলাকায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। এখানে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কারখানা নির্মাণ করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘চা শিল্পে যোগ হচ্ছে পাটের পাতা থেকে চা। এতে পাট ও চা শিল্প সমৃদ্ধ হবে। এই এলাকার বহু মানুষের বাড়তি কর্মসংস্থান হবে। পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে পাটকে নানাভাবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন উদ্ভাবন এই সবুজ চা। ফলে সোনালি আঁশের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে ছোট পরিসরে উৎপাদনে চলে গেছি। করিম জুট মিল এবং প্রকল্পের উদ্ভাবক ইসমাইল হোসেন খানের ঢাকার উত্তরায় ছোট একটি কারখানায় আমরা এই পাট পাতার চা উৎপাদন করছি জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায়। এরইমধ্যে আমরা ৮ থেকে ১০ টন পাট পাতার চা উৎপাদন করেছি এবং তা জার্মানিতেই ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে রপ্তানি করা হয়েছে। সরিষাবাড়ীতে আমাদের কারখানা হলে আমরা বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাব। দেশের বাজারে এই চা বিক্রি হবে আর বিদেশে তো রপ্তানি করা হবেই।’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এই চায়ের স্বাদ একদম গ্রিন টি'র মতো। আর দামও হবে সাধারণ চায়ের মতোই।’

চায়ের গুনাগুন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় দেখেছি কোনো রোগ বালাই হলে শিশুদের পাটের পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে খাওয়ানো হতো। পাট পাতার ভেষজ গুণ আছে। এই চা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী হবে। আমরা এরই মধ্যে এটা বাজারজাত করার সব ধরনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনুমোদন পেয়েছি।’

প্রকল্পের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন খান শুক্রবার সরিষাবাড়ীতে বলেন, ‘পাটের পাতা থেকে পানীয় (সবুজ চা) উৎপাদনের এই উদ্যোগ সরিষাবাড়ী থেকে শুরু হলো। এখানকার চা শুধু বাংলাদেশেই নয়, দেশের বাইরেও রপ্তানি হবে। চলতি বছরের শেষদিকে ভবন নির্মাণ শেষ হলে সবুজ চা উৎপাদন শুরু হবে।’

জানা গেছে, তোষা পাটের পাতা থেকে এই চা স্বাদে ভালো। তবে দুধ মিশিয়ে এই চা পান করা যাবে না। সূত্র: ডয়চে ভেলে

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন