জাপান গার্ডেন সিটিতে ফ্ল্যাট থেকে পড়ে নারীর মৃত্যু

  24-04-2018 04:36PM

পিএনএস ডেস্ক : সন্তান-সংসার নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছিলেন হাছিনা নকিব। তাঁর প্রতিবেশীদের কাছেও হতাশার কথা প্রকাশ করতেন। বাসা থেকেও পালিয়েছিলেন একবার। ঘটনার সময় পালাতে গিয়েই চারতলা থেকে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে জাপান গার্ডেন সিটির চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পড়ে হাছিনা নকিব (৫৬) নামের ওই নারীর মৃত্যু হয়। তাঁর স্বামী হারুন নকিব অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। জাপান গার্ডেন সিটির ১৬ তলা একটি ভবনের চারতলায় স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন হাছিনা নকিব।

জাপান গার্ডেন সিটি ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও মারা যাওয়া নারীর প্রতিবেশী মুফদি আহমেদ বলেন, ২০ নম্বর ভবনের ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাটটি হারুন নকিবের। তাঁর স্ত্রী হাছিনা নকিব মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। আগেও তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছে। আবার হাসপাতালে নেওয়ার কথা শুনে রান্নাঘরসংলগ্ন বারান্দার গ্রিলের কাটা অংশ দিয়ে তিনি পালাতে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

মুফদি আহমেদ বলেন, ‘গতকালও তাঁকে দেখেছি। তিনি প্রায়ই ছেলেদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতেন। একবার বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ ছিলেন বলেও শুনেছি।’

মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এর আগে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে চার দিন নিখোঁজ ছিলেন।

হাছিনা নকিবের পরিবার, পুলিশ ও প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা গেছে, হারুন নকিব ও হাছিনা নকিব দম্পতির সাদ, তৌফিক, শাওন ও তাহসান নামে চার ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুই ছেলে আলাদা বসবাস করেন। বড় ছেলে সাদ ব্যবসা করেন। তিনি জাপান গার্ডেন সিটির অন্য একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। দ্বিতীয় ছেলে তৌফিক উবার চালক। স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে তিনিও আলাদা থাকেন। অবসরের পর হারুন নকিব স্ত্রীর নামে এই ফ্ল্যাট কেনেন। এ ছাড়া অবসরের পর তিনি যেসব অর্থ পেয়েছেন, তাও স্ত্রীর কাছে গচ্ছিত ছিল।

নেশাগ্রস্ত দ্বিতীয় ছেলে তৌফিক প্রায়ই টাকা চেয়ে বিরক্ত করতেন মাকে। বড় দুই ছেলে সেভাবে লেখাপড়া না করায় এবং দ্বিতীয় ছেলের নেশা করা নিয়ে প্রায়ই তিনি হতাশায় ভুগতেন। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তৃতীয় ছেলে শাওন এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশুসন্তান তাহসানকে নিয়েও তিনি দুশ্চিন্তায় থাকতেন। এসব নানা ঘটনা থেকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন। প্রায়ই কাউকে না বলে বাসার বাইরে চলে যেতেন।

কয়েক দিন আগে ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বাসায় না ফেরায় তাঁর ভাইয়ের বাসায় পরিবারের লোকজন গিয়ে খোঁজ করে জানতে পারেন, তিনি সেখানে যাননি। চার দিন পর শাহবাগ এলাকায় তাঁকে খুঁজে পায় পুলিশ। স্বামী হারুন নকিব শাহবাগ থানায় স্ত্রীকে দেখেশুনে রাখার মুচলেকা দিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন।

আজ মঙ্গলবার হাছিনা নকিবকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ খবর জানতে পেরে গতকাল তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে বাসায় রেখে ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর প্রধান দরজা তালা দিয়ে রাখা হয়। রাতে তিনি রান্নাঘরসংলগ্ন ছোট বারান্দার গ্রিলের কাটা অংশ দিয়ে শাড়ি বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। ময়লা ফেলানোর সুবিধার্থে ওই গ্রিলটি কেটে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাড়ির লোকজন।

পুলিশের ধারণা, শাড়ি বেয়ে নামার সময় তাল রাখতে না পেরে তিনি নিচে পড়ে যান। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছিল।

মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ওই নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। চারতলা থেকে শাড়ি ঝোলানো দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, তিনি শাড়ি ধরে নিচে নামার চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

জাপান গার্ডেন সিটির ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম বলেন, হতাশা থেকেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। হাছিনা নকিবের লাশ পড়ে থাকতে দেখে ভবনের লোকজন আদাবর থানায় খবর দেয়।

পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

পিএনএস/জে এ /

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন