গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন

  26-04-2018 11:44AM


পিএনএস ডেস্ক: গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে বৈঠক চলছে। নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে।

এসব দিককে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন আজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করছে।

এদিকে উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর ক্রমেই জমে উঠছে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।

শহরের অলিগলি, বাজার, রাস্তার পাশে টানানো হয়েছে নির্বাচনী পোস্টার। এলাকায় এলাকায় মাইকিং, হ্যান্ডবিল দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় রয়েছেন সমর্থক, কর্মীরা। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে নির্বাচনী ক্যাম্প। এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন, দোয়া চাইছেন প্রার্থীরা।

বুধবার সকালে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গাছা এলাকার স্থানীয় আনু মার্কেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ধানের শীষ প্রতীকের মিডিয়া সেলের প্রধান ডা. মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার, গাছা সাংগঠনিক থানা বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন খান, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমতাজ উদ্দিন, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, গাছা সাংগঠনিক থানা জামায়াতের আমির মোতালিব হোসেন, যুবদল নেতা জিল্লুর রহমানসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আয়োজিত এক পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাসান উদ্দিন সরকার প্রার্থীদের মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সব অপরাধের মূল হলো মিথ্যাচার করা। মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহর পরে স্থান হচ্ছে জনগণের। সুতরাং জনগণ বিভ্রান্ত হলে মানুষ বিপদগ্রস্ত হবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অধিকার আমারও নাই, অন্য কারো নাই।’

অপর দিকে, ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে সকাল থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি ময়লার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারে গত ২০ দলীয় জোটের শাসনামলে আমাদের এখানে রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় গাজীপুর একটি ডাস্টবিনের শহরে পরিণত হয়েছে। আমি প্রথম অবস্থায় এগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ময়লা-আবর্জনা কীভাবে পরিষ্কার করা যায়, কীভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা যায়। দ্রুত যানজটমুক্ত শহর কীভাবে করা যায়, সেটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আমি কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে ১৫ মে ভোট দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। আমি গাজীপুরকে ক্লিন এবং গ্রিন সিটি করপোরেশন গড়তে চাই। সাধারণ মানুষ জ্বালাও-পোড়াও চায় না, মামলা-হামলা চায় না, তারা একটি নিরাপদ শহর চায়।’

এর আগে জাহাঙ্গীর আলম মহিলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এদিকে জাহাঙ্গীর আলম তার তিন হাজার ৪২০ জন কর্মীর জন্য নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন মোট ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা, প্রতিদিন জনপ্রতি আপ্যায়ন বাবদ সম্ভাব্য খরচ দেখানো হয়েছে ১৫০ টাকা করে। তার সম্ভাব্য ১০টি অফিস/ ক্যাম্পে দৈনিক ৯ হাজার ৬৬৬ টাকা করে আপ্যায়ন খরচ দেখানো হয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ৫৭টি পথসভার মাইক ও হাতমাইক খরচ ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা। মাইকিং খরচ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকা। তার মধ্যে মাইকিংয়ে ব্যবহৃত যানবাহনের ভাড়া ২৮ হাজার ৫০০ টাকা, মাইকিংয়ে নিয়োজিত ব্যক্তির পারিশ্রমিক ২৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৫৭টি পথসভার মাইকিংয়ের ভাড়াবাবদ সম্ভাব্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা। ১০টি অফিসের জন্য মোট আপ্যায়ন খরচ বাবদ এক লাখ ৭৪ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এতে দৈনিক আপ্যায়ন খরচ দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৬৬৬ টাকা। ১০টি নির্বাচনী অফিস স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ এবং ওইসব অফিস কর্মীদের আপ্যায়ন খরচ ৯০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমের যাতায়ত খরচ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কর্মীদের জন্য দুই লাখ টাকা এবং নিজের/এজেন্টের খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ক্যাম্প খরচ বাবদ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যার মধ্যে স্থাপনা খরচ ৫০ হাজার টাকা এবং অফিস কর্মীদের সম্ভাব্য খরচ এক লাখ ৮০ হাজার। ঘরোয়া বৈঠক/সভার জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১০ লাখ লিফলেট ছাপানোর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা।

অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তার নির্বাচনে সম্ভ্যাব্য মোট ব্যয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। তার মধ্যে তিনি তার হলফনামায় মোট ৫৭০ জন কর্মীর জন্য নির্বাচনী খরচ দেখিয়েছেন মোট ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা, যাদের প্রতিদিন জনপতি আপ্যায়ন খরচ ধরা হয়েছে ১০০ টাকা করে। প্রার্থীর ২টি অফিস আপ্যায়ন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৬০ হাজার টাকা, যেখানে কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়ন খরচ দেখানো হয়েছে ৪ হাজার টাকা করে। নির্বাচন প্রচারকালে তিনি ১৭১টি পথসভা করার জন্য মাইক ও হাতমাইক বাবদসহ খরচ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। তার শুধু মাইকিং খরচ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তার মধ্যে মাইকিংয়ে ব্যবহৃত যানবাহনের ভাড়া ৮০ হাজার টাকা, মাইকিংয়ে নিয়োজিত ব্যক্তির পারিশ্রমিক ২০ হাজার টাকা এবং ১৭১টি পথসভার মাইকিংয়ের ভাড়াবাবদ সম্ভাব্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রার্থীর ২টি নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা এবং ক্যম্প কর্মীদের জন্য আপ্যায়ন খরচ দেখানো হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ক্যাম্প/অফিস স্থাপন ও কর্মীদের জন্য মোট সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। যার মধ্যে অফিস স্থাপন খরচ ৫০ হাজার টাকা এবং কর্মীদের সম্ভাব্য আপ্যায়ন খরচ ৩০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া তার যাতায়ত খরচ ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে কর্মীদের জন্য এক লাখ ১৪ হাজার টাকা এবং নিজের/এজেন্টের খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তার ঘরোয়া বৈঠক/সভার জন্য ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা, ৫ লাখ লিফলেট ছাপানোর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। ৫ লাখ হ্যান্ডবিলের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ডিজিটাল ব্যানার খরচ ২লাখ ৪ হাজার ৪০০টাকা এবং টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খরচ এক লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এবার মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬। এতে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১। আগামী ১৫ মে সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন