২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ৪০ জনের

  24-06-2018 08:45AM

পিএনএস ডেস্ক : প্রতিদিনই দেশের সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৮ জন। এদের মধ্যে গাইবান্ধায় ১৮, রংপুরে ৬, গোপালগঞ্জে ৩, সিরাজগঞ্জে ২, নাটোরে ৩, লক্ষ্মীপুরে ২, ফরিদপুরে ২ ও টাঙ্গাইল, সাভার, ফেনী এবং চুয়াডাঙ্গায় একজন রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

গাইবান্ধা ও পলাশবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ির মহেশপুর এলাকায় শনিবার ভোরে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে খাদে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ৯ হন ও হাসপাতালে নেয়ার পর আরও ৯ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ২৮ যাত্রী।

পলাশবাড়ী থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে আলম এন্টারপ্রাইজ (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৬৪২২) নামে একটি যাত্রীবাহী নৈশকোচ ঢাকা-রংপুর- সৈয়দপুর-ঠাকুরগাঁও এর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। বাসটি পলাশবাড়ির মহেশপুর এলাকায় পৌঁছলে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। দুর্ঘটনা কবলিত এলাকার বাসিন্দা আবুল মিয়া জানান, প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে তিনি রাস্তার পাশে এসে দেখেন বাসটি এলোমেলো ভাবে দ্রুত গতিতে চালানো হচ্ছে।

বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরা বাচার জন্য চিৎকার করছিলেন। মুহূর্তেই বাসটি গয়েশপুর ব্র্যাক অফিসের সামনে একটি বড় গাছে সজোরে ধাক্কা খায়। এ সময় গাছটি উপড়ে পড়ে ও গাছের ডাল ভেঙে বাসের বিভিন্ন অংশ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে উল্টে যায়। বিকট শব্দ শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে উল্টে পড়ে থাকা বাসের ভেতর থেকে টেনেহিঁচড়ে ৩ শিশু নারীসহ ৯ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন য়ৌথ চেষ্টা চালিয়ে বাসের নিচে চাপা পড়া ২৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে। পরে পলাশবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৮ জন মারা যায়।

নিহত ৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার এমদাদ আলী, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ইউনুস আলী, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মিনারুল খান, কুড়িগ্রাম রাজীবপুর উপজেলার মাসুদ রানা, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবদুর রশিদ, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার জহিরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রুবেল মিয়া ও দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার আখতারুল ইসলাম। তারা পেশায় গরু ব্যবসায়ী, পোশাক শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিক।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পরপর যাত্রীদের উদ্ধার করলেও কে যাত্রী বা কে বাসের চালক তা খুজে পাওয়া যায়নি। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স এর অভাবে অন্তত ১৪ জন মুমূর্ষু যাত্রীকে পলাশবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বাড়ান্দায় ফেলে রাখতে হয়। হাসপাতালের চিকিৎসককেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্মচারীদের।

পরে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ঘটনাস্থলে পৌঁছে জরুরি ভাবে গাইবান্ধা থেকে অ্যাম্বুলেন্স এনে ১২ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড়টায় আরো ২ জন মারা যায়। তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও নিহতদের লাশ সৎকার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ সময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

রংপুর থেকে জানান, রংপুরে বালু বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় বিআরটিসি বাসের ৬ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৬ জন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার মধ্যরাতে সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়াশাহ্‌ এলাকায়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিআরটিসি’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা স্পেশাল বাস (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৫১৯৩) দিনাজপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসটি নীলফামারীর সৈয়দপুর এলাকায় আসলে পাংচার হয়ে যায়। শনিবার মধ্য রাতে সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়াশাহ্‌ এলাকায় বাসটি এসে রাস্তার ধারে চাকা মেরামত কাজ করছিল বাসের হেল্পার। এ সময় পেছন থেকে বালু বোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১৮-১৯০৪) বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে বাসে থাকা দুই নারীসহ ৬ জন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় ৬ জন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পেছনের কোনো সিগন্যাল লাইট জ্বলে না থাকার কারণে এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে বলে জানান যাত্রীরা। নিহতদের মধ্যে দিনাজপুরের উপ-শহরের গামেন্টস কর্মী নিশাত (২০) ও সাজ্জাদ (১৯) এর পরিচয় পাওয়া গেছে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ভাঙ্গায় বরিশাল থেকে বগুড়াগামী তুহিন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই ২ জন নিহত এবং অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে গাড়ির চালক নাটোরের ইব্রাহিম(৪০) এবং অপর জন হেলপার একই এলাকার হাবিব(৩২) বলে জানা গেছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, শহরের আলাইপুরে বালুভর্তি ট্রাক চাপায় মহিলাসহ দুই অটোবাইক যাত্রী নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরো অন্তত তিনজন। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের আলাইপুরস্থ কমলা সুপার মার্কেটের সামনে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, নলডাঙ্গা থানার সোনাপাতিল গ্রামের মঙ্গল দেবনাথের স্ত্রী সুলতা দেবনাথ ও কার্ত্তিক চন্দ্র দেবনাথের ছেলে কানাই দেবনাথ।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, রামগতি-সোনাপুর সড়কের ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও একজন আহত হয়েছে। নিহতরা হচ্ছেন, মিলন হোসেন ও সাহারা খাতুন। এ সময় সুরাইয়া আক্তার নামে একজন আহত হয়েছে। শনিবার ভোররাতে ওই সড়কের শেখের কিল্লাহ নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত দুইজনই একই পরিবারের সদস্য।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই এনজিও কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ায় গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই শওকত হোসেন জানান। নিহতরা হলেন- বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টারের (রিক) গোপালগঞ্জ অফিসের রেজিস্ট্রার ইমরান হোসেন (৩৮) ও মাঠ কর্মকর্তা পুলক ব্যাপারী (৩৪)।

এদিকে মুকসুদপুর-গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় লোকমান শেখ (৫১) নামে এক ইঞ্জিনচালিত ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো ১০ বাসযাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে উপজেলার দাসেরহাট নামকস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রায়গঞ্জে ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকের চালক ও সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বাসের ১০ যাত্রী। শনিবার ভোরে রায়গঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে রায়গঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোজাম্মেল হোসেন জানান। নিহতরা হলেন- ট্রাক চালক শরিফ উদ্দিন এবং তার সহকারী শফিকুল ইসলাম। তাদের দুজনেরই বাড়ি রায়গঞ্জ উপজেলার শ্যামনাই গ্রামে।

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর প্রাণ গেছে। শনিবার দুপুরের দিকে সখীপুর-গোপীনপুর সড়কের তৈলধারা বটার মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে সখীপুর থানার ওসি এসএম তুহিন আলী জানান। নিহত আবদুল বাছেদ মিয়া (৩০) উপজেলার জিতাশ্বরী এলাকার আবদুল জব্বার মিয়ার ছেলে।

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে এক যাত্রী নিহত এবং আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকালে মহাসড়কের আমিনবাজার তুরাগ এলাকায় এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে যাত্রীবাহী বাস ও পাওয়ার ট্রলি মুখোমুখি সংঘর্ষে পাওয়ার ট্রলি চালক আরিফুল ইসলাম (২৬) নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। শনিবার বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী বাইপাস অংশের লালপুল এলাকা এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আরিফ ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের কাতালিয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলোকদিয়া গ্রামের প্রধান সড়কে এ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহীও আহত হয়েছেন। নিহত পথচারী ওবায়দুর রহমান (৫০) ওই গ্রামের মৃত ইরফান আলীর ছেলে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন