হুমায়ূন আহমেদের আজ ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী

  19-07-2018 09:18AM


পিএনএস ডেস্ক: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।

বাংলাদেশে নানা অনুষ্ঠানে তার ভক্ত-শুভার্থীরা কামনা করেছিলেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন প্রিয় বাংলাদেশে। মানুষের সেই প্রার্থনা পূরণ হয়নি। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

তার মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। সেই শোক আজো কাটেনি ভক্ত-পাঠকদের হৃদয় থেকে। হুমায়ূন নেই কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে। তাকে নিয়ে বইমেলায় আসছে বই। পাঠক পরম মমতায় সংগ্রহ করছেন সেইসব বই।

হুমায়ূন আহমেদ যে হারিয়ে যাননি তা বইমেলায় গেলে বোঝা যায়। মানুষের মন থেকে তাকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। আর সব জায়গা থেকে হয়তো তিনি হারিয়ে যাবেন। কিন্তু পাঠকের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন। তিনি নেই এটা বাস্তবতা কিন্তু তার বইয়ের ভেতর দিয়ে তিনি সবসময় বেঁচে থাকবেন।

দিবসটি উপলক্ষে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে নুহাশপল্লীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও হুমায়ূন আহমেদের সন্তান নুহাশ, নিষাদ, নিনিত নুহাশ পল্লীতে আসার কথা রয়েছে। ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হবে। নুহাশপল্লীতে কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশপল্লীর আশপাশের মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র, পরিবারের সদস্য এবং হুমায়ুন আহমেদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন লেখকসহ প্রায় ৬শ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশপল্লীতে কোরআন তেলাওয়াত করবে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও দোয়ায় অংশ নেবে। ইতোমধ্যে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী নুহাশপল্লীতে আসছেন। বিশেষ করে হুমায়ূন ভক্ত তরুণ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থীরা নুহাশপল্লীতে ভিড় করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকও আসছেন নূহাশ পল্লীতে।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। বলা হয়, তার লেখা পছন্দ করেন না এমন মানুষও তার নতুন লেখাটি ‘গোপনে’ পড়ে ফেলেন। দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যারা তার অন্তত একটি নাটক দেখেননি কিংবা তার কোনো বই পড়েননি। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য। তিনিই তরুণ-তরুণীদের করেছেন বইমুখী। প্রত্যেক বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে হামলে পড়ে তার ভক্ত-অনুরাগীরা।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখ তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। সে অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আকাশচুম্বী জনপ্রিয় এ লেখকের মৃত্যুতে পুরো দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুলাই দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। সেখানে লাখো মানুষের অশ্রু-পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। এরপরের দিন তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। সেখানেই অসীম ঘুমে শায়িত হয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটার বিজ্ঞানী, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচীনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি।

তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ও জয় করেছে দর্শক ও সমালোচকদের মন। চলচ্চিত্রটি এ বছর অস্কার পুরস্কারে বিদেশি চলচ্চিত্র বিভাগে প্রাথমিক মনোনয়নও পেয়েছে।

টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সমান জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তার প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। তার হাসির নাটক ‘বহুব্রীহি’ এবং ঐতিহাসিক নাটক ‘অয়োময়’ বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। নাগরিক ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর চরিত্র বাকের ভাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন