১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ : মামলার ৪৯ শতাংশই রাজধানীতে

  16-08-2018 06:35PM

পিএনএস ডেস্ক : ট্রাফিক সপ্তাহে সারা দেশে হওয়া মামলার ৪৯ শতাংশ আর জরিমানার ৭২ শতাংশ আদায় হয়েছে রাজধানীতে। গত মঙ্গলবার শেষ হওয়া ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ জোর দিয়েছিল পুলিশ। তবে এত মামলা ও জরিমানার পরেও বন্ধ হয়নি সড়কে নৈরাজ্য।

গতকাল বুধবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। তার ওপর প্রচণ্ড গরম। রাজধানীর সড়কে পথচলতি মানুষের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও ছিল সামান্য। ফলে সড়কে নৈরাজ্য ছিল অন্য কয়েক দিনের তুলনায় কম। তবে ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শুরু হয় পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ।

পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক সপ্তাহের মেয়াদ তিন দিন বাড়িয়ে ১৪ আগস্ট করে। ট্রাফিক সপ্তাহের ১০ দিনে সারা দেশে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার ২৪৯টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে মামলা হয়েছে ৮৮ হাজার ২৯৩টি।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৪৬০। এর মধ্যে ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহন ১১ লাখ ৬০ হাজার ৮৩টি। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য জেলায় নিবন্ধিত যানবাহনও ঢাকায় চলাচল করে। যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঢাকায় মামলার সংখ্যাও বেশি হয়েছে।

ট্রাফিক সপ্তাহে মোট জরিমানা আদায় করা হয় ৭ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। এর মধ্যে ঢাকায় জরিমানা আদায় হয়েছে ৫ কোটি ১০ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৭ টাকা। মামলা ও জরিমানার পাশাপাশি যানবাহনের চালক ও পথচারীদের উদ্দেশে প্রচার করা হয় সচেতনতামূলক বার্তা। তবে এত কিছুর পরও রাজধানীর সড়কে নৈরাজ্য বন্ধ করা যায়নি।

ট্রাফিক সপ্তাহে রাজধানীতে হওয়া মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৩ হাজার ৮৬৩টি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। এ সময় ১ হাজার ৭৪২টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। সাত হাজার ৯১৫টি মামলা হয়েছে উল্টো পথে চলাচল করায়। ফিটনেস-সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৩৩১টি।

১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হওয়ার পর গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। সকাল থেকে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি গণপরিবহন ছিল কম। তবে চালক, পথচারীরা গতকালও হরহামেশা ট্রাফিক আইন অমান্য করেছেন।

কল্যাণপুর, শ্যামলী, ফার্মগেট এবং বাংলামোটর এলাকায় দেখা যায়, মাথার ওপরে পদচারী-সেতু থাকলেও লোকজন নিচ দিয়ে পার হচ্ছে। মোটরসাইকেলের চালকের হেলমেট থাকলেও আরোহীদের অধিকাংশের হেলমেট নেই। চালকেরা যানবাহন চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহার করছেন। যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছেন-নামাচ্ছেন।

ট্রাফিক সপ্তাহে মোটরসাইকেলের চালকের পাশাপাশি আরোহীরও হেলমেট থাকার ওপর জোর দেওয়া হয়। আরোহীর হেলমেট না থাকলে ২০০ টাকার মামলা দেওয়া হয়। গতকাল দেখা যায়, অধিকাংশ মোটরসাইকেলচালকের হেলমেট থাকলেও আরোহীর নেই। পথচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার বন্ধ হচ্ছে না। গতকালও হাত উঁচিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে বিপজ্জনকভাবে পথচারীদের রাস্তা পারাপার হতে দেখা যায়। বাংলামোটরে পদচারী-সেতু ব্যবহার না করেই রাস্তা পার হওয়া পথচারী আবদুল মোমিন বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি কম। ফাঁকা পেলাম তাই পার হলাম। বারবার ওঠানামা করতে ইচ্ছে করে না।’

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও গণসংযোগ) মো. সোহেল রানা বলেন, জনগণের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়ে গেছে। তবে ট্রাফিক সপ্তাহের ফলে জনগণের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ নিয়মিত কার্যক্রম এবং আইন প্রয়োগ করার পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতেও ব্যাপকভাবে কাজ করবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন