প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে দেশ, প্রকৃতি লালনে সতর্ক পদক্ষেপ জরুরি

  04-12-2018 03:27PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ১৫টি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। জার্মানির রুহর বিশ্ববিদ্যালয় বোখাম এবং ডেভেলপমেন্ট হেল্প অ্যালায়েন্স নামে একটি জার্মান বেসরকারি মানবিক সংস্থা যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে।

২০১৮ বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদনে ১৭২টি দেশের ভূমিকম্প, সুনামি, হারিকেন এবং বন্যার ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব দুর্যোগ মোকাবিলার মতো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে। নতুন এ জরিপে দাবি করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ১৫টি দেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

জরিপে বলা হয়, গবেষকরা মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিশুদের দুর্দশার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তাদের তথ্যানুসারে বিশ্বব্যাপী প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে একটি দুর্যোগ-প্রবণ এলাকায় বসবাস করে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, গত বছর সংঘাত-সংঘর্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বয়স ১৮ বছরের নিচে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের স্তর বেড়ে যাওয়াসহ আরা নানা কারণে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বেশির ভাগ দ্বীপদেশের নাম। এর মধ্যে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভানুয়াতু দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, তার পরেই রয়েছে প্রতিবেশী দেশ টোঙ্গা। আর আমরা আছি ঝুঁকির নবম স্থানে। আমরা যদি এখনো সতর্ক না হই, তাহলে বিপর্যয় এড়ানো কঠিন হবে।

নানাভাবে আমরা প্রকৃতিকে বিষিয়ে তুলছি। তাপদাহ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা বিরাজমান। চরম এ অবস্থা হওয়ার আগেই কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবা জরুরি। উন্নত বিশ্ব এর জন্য বেশি দায়ী। যদিও মহাসাগরীয় এলাকার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

পারমাণবিক চুল্লিসহ অতিরিক্ত কার্বন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়ানোর পাশাপাশি গাছপালা, বন উজাড় ও পাহাড় ধ্বংস করার কুফলেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। আমরা প্রকৃতিকে তার মতো করে চলতে দিচ্ছে না। তার সুফল প্রতিনিয়ত ভোগ করলেও, এর লালনে অমনোযোগী। যে প্রকৃতি থেকে আমরা নিঃশ্বাস নেওয়া থেকে অনেক উপকরণ পাই, সে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা ছাড়া আমাদের অবদানটা কোথায়?

যান-বাহনের কালো ধোঁয়া, কল-কারখানার ধোঁয়া, কত রকমের জ্বালানি, কল-কারখানার বর্জ্য আমাদের পরিবেশকে নানাভাবে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে।এর কুফলে পানি মাছ মরছে, পার্শ্ববর্তী জমিতে গাছ-ফল-ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব চোখের সামনেই ঘটছে।ভূগর্বের পানি বিষাক্ত। অদৃশ্য বিষ আর্সেনিকদূষণ মাত্রাতিরিক্ত,যা মানব জীবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমরা কেবল হা-পিত্যেস করছি, প্রতিকার ও উত্তরণের কার্যকর উপায় থেকে অনেক দূরে।

এতকিছুর পরও বনভূমি উজাড় করা, পাহাড় কাটা থেমে নেই। থেমে নেই নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর দখলের অনৈতিক প্রতিযোগিতা। রাসায়নিক সার ও পণ্য ব্যবহার হচ্ছে অবাধে।কালো ধোঁয়া ছেড়ে অবাধে চলছে যানবাহন, একই অবস্থা কর-কারখানায়। ধূলাবালিসহ এসব ক্ষতিকর দিকগুলো বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণে নেই ফলপ্রসূ কর্মসূচি। অথচ এর কুফলে শ্বাসকষ্টসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ যারপরনাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে প্রকৃতি বেশামাল আচরণ করছে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে অনেক ঋতুই এখন নামে আছে। বাস্তবে প্রতিফল নেই। কিছুটা অনভূত হয় বৃষ্টির বর্ষা, শীত, গ্রিষ্ম আর শরৎ।

অবস্থা নাগালের বাইরে যাওয়ার উপক্রম। এখনো আমরা যদি সতর্ক না হই আর হব কবে? সমস্যা ঘরের দরজায় না-আসা পর্যন্ত আমাদের ঘুম ভাঙে না। সময়ের কাজ সময়ে করতে আমরা যেন অপারগ। সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করার আগে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখনই সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় যা যা করণীয়, তার সব এখনই না করলে বিপর্যয় কাটানো কঠিন হবে বৈকি। সে অবস্থা সৃষ্টির আগে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের এখনই সময়।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন