ভোট সামনে রেখে সচিবালয়ে নানামুখী তৎপরতা

  07-12-2018 09:04AM


পিএনএস ডেস্ক: একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানামুখী তৎপরতা চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকারি সব সুবিধা গ্রহণ করছেন মন্ত্রীরা। সরকারি কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে প্রধান্য পাচ্ছে দলীয় কার্যক্রম। নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে নানান পরিকল্পনা। সংবাদ সম্মেলন করে ভোটারদের কাছে নিজেদের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন মন্ত্রীরা।

গতকাল শিল্পমন্ত্রী নিজ দফতরের সম্মেলন কক্ষে তার পাঁচ বছরের সফলতা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। গার্মেন্ট শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকেরা ভোটের আগে যেন কোনো ধরনের আন্দোলন করতে না পারেন এ জন্য নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রীদের রাজনৈতিক সভা সমাবেশ কাভারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মন্ত্রীদের এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সাহস পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মন্ত্রীদের এসব কর্মকাণ্ড আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসি চাইলে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ও তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রীরা এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি প্রকাশ করতে পারে না। তারা কী করেছেন সেটি জনগণ দেখবে। বিশ্বের কোথাও এ ধরনের নজির নেই। মন্ত্রীদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যেটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। তার পরও যদি তারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন ইসির উচিত আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিগত ১০ বছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত ১০ বছরের উন্নয়নমূলক নানা দিক তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে দেশের চামড়া শিল্প গার্মেন্ট শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে। আমরা টেনারি শিল্পকে এগিয়ে নিতে হাজারীবাগ থেকে কারখানা সরিয়ে সাভারে নিয়েছি। এতে করে শহরের মধ্যে যেমন দূষণ কমেছে তেমনি এ শিল্প খুঁজে পেয়েছে নতুন দিগন্ত। বিগত পাঁচ বছরে শিল্পমন্ত্রণালয় গৃহীত নানামুখী পদেেপর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকারখানগুলোর ধারাবাহিক অগ্রগতির ফলে শিল্পখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। এর ফলে মাথাপিছু আয়ে শিল্পখাতের আবদান দাঁড়িয়েছে ৩৩.৭১ শতাংশ।

এর আগে গত বুধবার স্বাস্থ্যেেত্র বর্তমান সরকারের ১০ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যেেত্র আমরা যে উন্নয়ন দেখিয়েছি তার জন্য মা-বোনদের কাছে শেখ হাসিনার কাছে একটি করে ভোট চাই। খালেদা জিয়া তার শাসনামলে হেলথ কিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা সেগুলো আবার চালু করেছি। এটি আমাদের সরকারের বড় অর্জন। তরুণদের প্রথম ভোট হবে স্বাধীনতার পরে শক্তির প।ে বিগত ১০ বছরে স্বাস্থ্যখাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা আবার নির্বাচিত হবেন।

এদিকে ভোটের আগে গার্মেন্ট শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক কর্মচারীদের যেকোনো মূল্যে শান্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক। তিনি গতকাল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির ৩৮তম সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এ নির্দেশনা দেন। প্রতিমন্ত্রী আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যাতে কোনো মহল দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে যে বিষয়ে শ্রমিক-মালিকদের সর্তক থাকার পরামর্শ দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম যে মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেছে তা এ মাস থেকে কার্যকর হবে। মজুরি কাঠামোর সাতটি ধাপ ২০১৩ সালের মজুরি কাঠামোর প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। মজুরি কাঠামোর এক ধাপের সাথে আরেক ধাপের বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে যাতে শ্রমিক-মালিকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় এ জন্য বিজিএমইএ, বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দেকে কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি স্পষ্ট করার তাগিদ দেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী নির্বাচন পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা এবং শ্রমিক অসন্তোষ যাতে না দেখা দেয় এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের মজুুরি পরিশোধের জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

সভায় গাজীপুরের নিউ টাউন নিটওয়্যার কোম্পানি বন্ধ হওয়া, মজুরি না দেয়া এবং শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে গাজীপুরের সিটি মেয়র জহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে বসে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের সুপারিশ করা হয়।

সভায় বিকেএমইএ-এর সভাপতি সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান, বিজিএমইএ-এর সভাপতি মো: সিদ্দিকুর রহমান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: জাহাঙ্গীর আলম, মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ, কালকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো: সামসুজ্জামান ভূঁইয়া, শিল্প-পুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালমসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোর অনুষ্ঠান কাভারেজের কাজ করছেন। গতকাল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তার মন্ত্রীর একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের খবর সাংবাদিকদের দিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, শুক্রবার বেলা ৩টায় রাজধানীর মতিঝিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ডিএসএ ভবনে (মতিঝিল থানার পিছনে) স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। উল্লেখ্য, রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনের এমপি প্রার্থী।

এ ছাড়া কয়েকজন জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়মিত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সাথে তাদের নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। সময় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সাথে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে। জনসংযোগ কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের সাথে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে যোগাযোগ রা করে চলছেন। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন