মাদকমুক্ত সমাজ নিশ্চিতে সরিষার ভূত আগে তাড়াতে হবে

  16-02-2019 03:38PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, উখিয়া-টেকনাফসহ ১৯৩টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। মিয়ানমারকে ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ করতে অনেকবার বলেছি। তারা বলে কিন্তু বাস্তবে কিছুই করে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ছি সীমান্তকে আমরা কঠোরভাবে সুরক্ষা করবো।

১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ পেলেই আমাদের জানান, আইজিপিকে জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মে মাদকের বিষয়ে কঠোর নিষেধ আছে। আসুন আমরা ধর্মকে হৃদয়ে ধারণ করে ইয়াবাকে বর্জন করি। মাদক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বিকল্প কর্মসংস্থান করতে সরকারের সহায়তা চাইলে তাও করা হবে, তবুও আপনার এ পথ থেকে ফিরে আসেন।

নাফ নদীতে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নৌকাগুলো মাছ ধরতে যায় আর আসার সময় ইয়াবা নিয়ে আসে। এদিন সকাল ১১টার দিকে টেকনাফের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির তিন ভাইসহ ১০২ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে কজন জনপ্রতিনিধিও।

জিরো টলারেন্স ঘোষণা, একের পর এক সাঁড়াসি অভিযানের পরও মাদক ব্যবসা যে থেমে নেই, দেশব্যাপী প্রায়ই মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও যুক্তদের আটকের ঘটনা তার অকাট্য প্রমাণ।এই এলাকায় একসঙ্গে ১০২ জনের আত্মসমর্পণ মনে করে দেয়, কত লোক এর সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে আরো যে আছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। সংখ্যাধিক্য দেখে আমরা আতঙ্ক্ষিত সংখ্যা দেখে।

কদিন পরই মিডিয়ায় খবর আসছে, মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে বাবার মৃত্যুর। রাজধানী ঢাকায় মাদকাসক্ত বাবার হাতে সন্তান হত্যার খবর পাই কদিন আগে।মেয়ে সন্তানের হাতে এই রাজধানীতেই খুন হন বাবা-মা। আর ওই সন্তান ছিল পুলিশ কর্মকর্তার।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিলের কারণও এই মাদক। মাদক পরিবার, সমাজ, যুবসমাজসহ দেশকে ধ্বংস করে দেয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। আর তা হলো, মাছ ধরতে গিয়ে মাদক নিয়ে আসা। এখানে কাঁচা পয়সার কারণে অনেকে জড়িয়ে পড়ছে। জড়িতদের চিহ্নিত এবং অন্যরা যেন এ পথে পা না বাড়ায়, সে জন্য সতর্কসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি স্মরণ করে দেওয়া জরুরি। আর কোন কোনপথে কীভাবে মাদক আসে, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চোরাইপথে যখন মাদক আসে, তখন খুব একটা সমস্যা হয় না বলে সীমান্তবাসীর দাবি। কিন্তু যত সমস্যা তার সবই নাকি গরুর ক্ষেত্রে! এটা একটা রহস্য বৈকি।এ মাসের শুরুতে ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ বাংলাদেশীকে বিজিবি হত্যা করেছে। আগে হত্যা করত বিএসএফ, এবার সে কাজটা পালন করেছে বিজিবি। আমরা কোনোদিন শুনিনি সীমান্তে মাদক-সোনা চোরাচালানী হত্যা, খুন তো দূরের কথা গুলিবিদ্ধ হতে। যত হয়, যা হয়- তা কেবলই গরুসংশ্লিষ্ট।

মাদকদব্য সহজে হাতের কাছে পাওয়ায় এবং সঙ্গদোষে এর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে ভাড়ছে। মাদক শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করার কথা যতটা বলা হচ্ছে, সেটা বাস্তবে শতভাগ কার্য়কর করা হলে এর মাদক মুক্ত সমাজ গড়া সহজ হতো বৈকি। কিন্তু বাস্তবতা বলে দিচ্ছে, মাদকের বিস্তার ঘটেই চলেছে।সর্বনাশা মাদকের গ্রাস ও নাগপাশ থেকে নিস্তার মিলছে না। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকমুক্ত সমাজ নিশ্চিত করতে হলে আগে নাকি সরিষার ভূত তাড়াতে হবে।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন