মেলায় একুশের আমেজ, বেড়েছে বই বিক্রি

  20-02-2019 09:16PM

পিএনএস ডেস্ক : আজ বুধবার, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২০তম দিন। আগামীকালই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস। প্রতিবছর এ দিনে মাতৃভাষার জন্য নিজের জীবন দেয়া বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে দেশের জনগণ। একই সাথে এদিন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় থাকে বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ছুটির দিন থাকায় সবাই মেলায় আসেন। কেউ আসেন বই কিনতে। কেউ আসেন ঘুরতে। এককথায় মেলা এদিন একুশের আমেজে পরিপূর্ণ থাকে। বইমেলার ২০তম দিনে আজ মেলায় বই বিক্রি বেড়েছে। অমর একুশকে সামনে রেখেই যেন এমন বিক্রি।

বিকেল ৩টায় বইমেলা কর্তৃপক্ষ সর্বসাধারণের জন্য মেলার দ্বার খুলে দেয়। এর পরপরই বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে থাকে। মেলায় বিক্রিও ছিল অনেক ভালো। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা এমব কথা জানিয়েছেন। প্রতিবছর অমর একুশ উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি বিকিকিনি হয়। এজন্য সবার অপেক্ষা একুশে ফেব্রুয়ারীর দিকে।

সরেজমিন বইমেলায় প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজ কর্মদিবসেও মেলায় বই বিক্রি ভালো। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে মেলায় সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়। আজ তার ছোঁয়া ছিল মেলায়। আজ বড় বড় সব প্রকাশনীতে অনেক ভালো বই বিক্রি হয়েছে। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের আজ থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। তাম্রলিপি, অনন্যা, অন্য প্রকাশ, কাকলী, অবসর, ঐতিহ্য, সময় প্রকাশন, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স, অন্বেষা প্রকাশন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, আগামী প্রকাশনী, নালন্দা প্রকাশনী প্রমুখ স্টলে ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। এসব প্রকাশনীতে ভালো বিক্রি হয়েছে ।

অন্য প্রকাশের বিক্রয়কর্মী টিপু বলেন, ‘প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হয়। এ দিনটাকে সামনে রেখে আজকেও আমাদের এখানে ভালো বিক্রি হচ্ছে। আশা করি কালকে মেলা অনেক ভালো বিক্রি হবে। সে আশায়ই থাকলাম।’

কাকলী প্রকাশনীর সেলস ম্যানেজার এনামুল হক রাসেল বলেন, ‘মেলা এখন শেষের দিকে। এখন মেলায় ভালো বিক্রি হবে। এটাই স্বাভাবিক। সে হিসেবে আজ বিক্রি ভালো। আর আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি। তাই বিক্রি অনেক বাড়বে এটাই আশা করি।’

মেলায় নতুন বই

আজ বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২০তম দিনে মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ এসেছে ২৪টি, উপন্যাস ১৮টি, প্রবন্ধ ৯টি, কবিতা ৪৭টি, গবেষণা ২টি, ছড়ার বই ৪টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৫টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ৬টি, নাটক ১টি, ভ্রমণ বিষয়ক বই ৩টি, ইতিহাসভিত্তিক বই ২টি, রাজনীতির বই ২টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ১টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য গ্রন্থ এসেছে ৯টি।

গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সওগাত পত্রিকার শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. ইসরাইল খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. হাবিব আর রহমান এবং ড. আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ।

প্রাবন্ধিক বলেন, সওগাত-যুগের অবসান ঘটেছে বটে, কিন্তু এখনও তার প্রভাব অনুভব করা যায়। সওগাতের প্রগতিবাদী সুচিক্কণ সাহিত্যরুচির অনুসারী পত্রিকা তরুণদের মধ্যে থেকে এখনও বের হচ্ছে। ভুললে চলবেনা আজ বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে তরুণদের যে সাহিত্যিক মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে-তারাতো সওগাত-কল্লোল-কালিকলম-প্রগতি-বুলবুল-চতুরঙ্গ-ছায়াবীথি-গুলিস্তাঁরই প্রতিনিধি। তিনি বলেন, সওগাত বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। ‘সওগাত’ তাই কালের দাবি পূরণকারী ইতিহাসের গতি-নিয়ন্ত্রক একটি সাহিত্য-পত্রিকা।

আলোচকবৃন্দ বলেন, সওগাত পত্রিকা বাঙালি মুসলিম সমাজে প্রগতিশীলতার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এ পত্রিকা নারীস্বাধীনতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রেখেছে তেমনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উদার আবহ সৃষ্টিতে এই পত্রিকার ভূমিকা ঐতিহাসিক গুরুত্বের দাবি রাখে। তারা বলেন, সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন এই পত্রিকার মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলামসহ বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশ, পরিচর্যা ও লালনে যে ভূমিকা রাখেন তা এক কথায় অবিস্মরণীয়।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সওগাত পত্রিকার সামাজিক সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা ঐতিহাসিক। সওগাত পত্রিকার শতবর্ষ তাই আমাদের সাংস্কৃতিক পরিসরে বিশেষ তাৎপর্যের দাবি রাখে। বাংলা একাডেমি এ উপলক্ষটিকে স্মরণ করে যেমন জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছে তেমনি আমরা মনে করি আরও বৃহৎ পরিসরে সওগাত পত্রিকা বিষয়ে গভীর গবেষণা প্রয়োজন।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন কবি মাসুদুজ্জামান, কবি মুজতবা আহমেদ মোরশেদ, কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, প্রাবন্ধিক শীলা মোস্তফা এবং কবি প্রত্যয় জসিম।

কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি আসাদ চৌধুরী, নাসির আহমেদ, মারুফুল ইসলাম এবং ওবায়েদ আকাশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ এবং অলোক বসু।

অমর একুশের কর্মসূচি

আগামীকাল বৃহস্পতিবার অমর একুশ উপলক্ষে মেলা চলবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আগামীকাল মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে রয়েছে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করবেন কবি অসীম সাহা।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা। একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন ভাষাসংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন