মহামারি আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘন

  26-05-2019 08:18PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১৮ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৫৪টি আর শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৩৪টি। ১৪৪ শিশু খুন হয়েছে। অন্তত ছয়জনের গুম হওয়ার অভিযোগ আছে। যে ঘটনাগুলো নাগরিক সমাজকে দারুণভাবে আহত করছে।

২৫ মে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আইনের শাসন, জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা’র দাবিতে আয়োজিত নাগরিক নিরাপত্তা জোটের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনেক সামাজিক আন্দোলনের সংগঠন মিলে এ জোট গঠন করা হয়েছে। বাকি সংগঠনগুলোকেও এ জোটে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় শূন্যতা তৈরি হওয়ায় নাগরিকদের নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন; কিন্তু তা হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। কোনো জবাবদিহি নেই। দলীয়করণ বন্ধ করে সব প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজাতে হবে।’ কথাগুলোকে অসত্য প্রমাণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।

এ বক্তব্যগুলো নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের। তারা যা বলেছেন, দেশের সামগ্রিক চিত্র বাস্তবে তাই। মানবতা, মানবাধিকার, মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, মনুত্ববোধ, শিষ্টাচার সর্বোপরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেছে বললে কমই বলা হবে বলে মনে করেন মানবাধিকারে বিশ্বাসীরা। যে কারণে আজকে আওয়াজ উঠেছে নাগরিকের নিরাপত্তায় বৃহৎ ঐক্যের।এটিকে সময়ের দাবি বলে মনে করছেন গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষরা।

দিন যত যাচ্ছে, সময় যত গড়াচ্ছে, মানুষ ততই নানা ধরনের সমস্যা ও সংকটে পতিত হচ্ছে। শিকার নানাবিধ অনাচারের। সমাজের প্রায় সর্বত্র যে পচন ধরেছে, সে সত্যটা সামনে চলে আসছে। তা না হলে আজকের সরকারের সুহৃদরা বর্তমান বাস্তবতায় কঠিন সত্য উচ্চারণ করতেন না। সেদিন যারা ওই অনুষ্ঠানে তথ্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, তাদের সবাই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের প্রতি নানাভাবে, নানা কারণে দুর্বল ছিলেন এবং এখনো আছেন।

সামাজিক বাস্তবতা হলো, দেশে একধরনের ভীতির সংস্কৃতি কাজ করছে, যা মুক্ত ও স্বাধীন গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মোটেও সহায়ক নয়। বরং ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি দেশ, জাতি ও সভ্যসমাজের জন্য অতীব জরুরি। অথচ জরুরি এক কাজটা রাজনীতিবিদরা করতে ব্যর্থ হওয়ার কুফলস্বরূপ আজ সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বৃহত্তর ঐক্য কামনা করা হচ্ছে।

যারা এ ঐক্য কামনা করেছেন, তারা সময়ের সাহসী সন্তান হিসেবে পরিগণিত হবেন। তারা কতটু পারলেন, সেটা বড় কথা নয়; বড় কথা হলো তারা সমস্যাটা চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছেন এবং সেটা যৌক্তিকভাবে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপনে শতভাগ সক্ষম হয়েছেন। বল তারা তুলে দিয়েছেন সর্বস্তরের সবার কাছে, এবার দেখার পালা কে কীভাবে খেলে।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন