কথিত শিক্ষিতদের কার্যক্রমে বনের পশুরাও লজ্জা পাচ্ছে

  15-06-2019 04:23PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : না, কাজটি অজপাড়াগাঁয়ের কোনো গণ্ডমূর্খ এমনটা করেননি। করেননি বস্তির কোনো বকল ব্যক্তি। বরং এদের দ্বারা কস্মিনকালেও এমন অঘটনঘটনপটীয়সী কাজ সম্ভব নয়। তারা এমন কুক্ষিগত করার মতো অপকর্ম কখনো ভাবতেও পারেন না।

বস্তির অশিক্ষিত মানুষরা, শত কষ্ট সত্ত্বেও কখনো না-খেয়ে, কখনো আধপেট খেয়ে মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাজ্যের সুখে বুকে ধারণ করে নিজের মতো করে জীবন যাপন করেন। কারো বাড়া ভাতে তারা ছাই দেন না। করেন না কারো অপকার। বরং কারো জন্য কিছু করতে পারলে তাদের আনন্দের সীমা থাকে না।

আমরা চার ভাই। বাবা চার ভাইকে চার রকম শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। একেবারে ছোট ভাইকে ওকিল/আইনজীবী বানাতে চেয়েছিলেন। বাবার এ চাওয়ায় আমি শক্তভাবে বাধা দিয়েছিলাম এবং জ্ঞাতসারে আইনজীবী পেশার সঙ্গে যুক্ত- এমন কারো পরিবারের সঙ্গে আত্মিয়তা করতে যৌক্তি তুলে ধরি। আমার বাবা আমার সে যৌক্তি মেনে নেন।

কাজের খোঁজে ঢাকায় এসে ছোট বোনের বাসায় থাক থাকা শুরু করি। এমনকি বিয়ের পরও থাকি। আমার ছোট ভাইও বোনের বাসায় থেকে বিয়ের পর্ব সেরেছে। সে এখন নিজের বাড়িতে বারিধারায় থাকে। বোনও নিজের বাড়িতে থাকে। টানাটানি দেখে আমাকেও তার বাসায় থাকে বলে। এখনো তিনটি রুম খালি রেখে দিয়েছে আমার জন্য।

গত সপ্তাহে ভগ্নিপতি আম-লিচুর পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা আমার বাসায় বাসায় দিয়ে যান। আমার মাও বর্তমানে বোনের বাসায় আছেন। ওই বাসায় থাকতে মা বেশি পছন্দ করেন। আমরা চার ভাই ঢাকায় থাকি। বাকি তিন ভাই বারিধারায় থাকেন। অথচ মা বোনের বাসায় গেলে খুব একটা আসতে চান না। যদিও আমরা সদাসর্বদা মাকে মাথায় তুলে রাখার চেষ্টা করি।

গণমাধ্যমে একটি দুঃখজনক সংবাদ দেখে এসব লিখছি আর কি। কারণ বোনদের কাছে মা আর ভাই এ দুটি বিষয় সবার আগে। তারা ভাই আর মা বলতে ব্যাকুল যেন। অন্তত আমার বোনদের যেমন দেখেছি। দেখেছি আমাদের স্বজনদের পরিবারেও। হয়তো নিম্ন-মধ্যভিত্ত পরিবার বলে এটা এখনও টিকে আছে আমাদের মতো গোবেচারাদের মধ্যে।

খবরের পাতাজুড়ে দেখলাম ‘নিজের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন তার মা ও ভাই। মা শামসুন নাহার তসনিম ও ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ায় শুক্রবার (১৪ জুন) তুরিনের বিরুদ্ধে এ জিডি করা হয়।

‘তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির বলেন, শুক্রবার (১৪ জুন) কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসার পর আমরা উত্তরার বাসায় যাই। কিন্তু বোনের নির্দেশে বাসার দারোয়ান ও আনসার সদস্যরা আমাদেরকে প্রবেশ করতে দেয়নি।

‘তিনি আরও বলেন, আমার আসার সংবাদ পেয়ে কাজের মেয়ে নীচে নেমে আসে এবং আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তুরিন আপু বাসায় আছে কি না? তিনি আমাকে বাসায় আছে বলে জানান। পরবর্তীতে বাসায় ঢুকতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফিরে আসি। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছি। জিডি নম্বর- ৭৩৮, ১৪ জুন।

‘জিডি করার বিষয়টি উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা নিশ্চিত করে বলেন, কানাডা প্রবাসী শাহনেওয়াজ বাসায় ঢুকতে চাইলে তার বোন তুরিন আফরোজ তাকে ঢুকতে দেয়নি বলে জিডিতে উল্লেখ করেছেন।

‘এর আগেও ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (জিডি নম্বর- ১১৮৮) করেছিলেন তার মা। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।

‘মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২ মার্চ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহার এবং অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে তুরিন বাড়ি ও জমির দলিলপত্রও দখলে নিয়ে নেন।’

ছিঃ বলতেও লজ্জা লাগে। কারণ যা-ই থাকুক, একজন বিখ্যাত ব্যক্তির এমন কাজ ভাবায় বৈকি। গর্ভবতী মা আর মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া ভাইকে বাসায় ঢুকতে না দেওয়া দুনিয়ার সব বোনদের জন্য চরম লজ্জা ও গ্লানির। ভাইকে বাদ দিলেও মায়ের প্রতি এমন আচরণ দুনিয়ার সব সন্তানের জন্য পরম বেদনার। মায়ের প্রতি এ অসম্মান, সব নারীর প্রতি অসম্মানের শামিল।

শিক্ষা মানুষকে মহৎ হতে শেখায়, বিনয়ী করে; করে সচেতন। মানুষ ও মানবতার উপযোগী করে গড়ে তোলে প্রকৃত শিক্ষা। জ্ঞান আহরণের মধ্য দিয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত হওয়ার হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানে-গুণে অতিমানব বা মহামানবে পরিণত করে।

আমাদের খালু ছিলেন রেলের একজন ড্রাইভার। তিনি প্রায়ই বলতেন, শিক্ষিত মানুষকে নাকি বনের পশুও শ্রদ্ধা করে। এখন দেখছি, হালের কথিত উচ্চ শিক্ষিতরা আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিতে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। মানুষ এদের কাছ থেকে জাগ্রত বিবেকের প্রতিধ্বনি শুনতে পায় না। বরং লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে যেভাবে পারি ধরি-মারি খাই মার্কা কার্যক্রম করে চলেছি। এসব অপরিণাদর্শী কার্যক্রম দেখে সচেতন জনগোষ্ঠী শুধু নয়; বনের সংঘবদ্ধ পশুরাও লজ্জা পাচ্ছে বৈকি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন