‘ভারতকে পাইপলাইনে করে গ্যাস নিতে না দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে’

  08-07-2019 08:51PM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে পাইপলাইনে করে গ্যাস নিতে না দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সে সময় গ্যাসের ভাগ রেখে দিলে দেশে এখন এলএনজি আমদানি করতে হতো না। এ ছাড়া তিনি বলেছেন, অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের বর্ধিত দাম মেনে নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে আজ সোমবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে।


গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও এলএনজি আমদানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন করে দিয়ে গ্যাস নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সরকার সে সময় তা নিতে দেয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে পাইপলাইনে গ্যাস নিতে দিয়ে দেশের জন্য ভাগ রেখে দিতেন, যা অর্থনৈতিক কাজে লাগানো যেত। তাহলে এখন হয়তো এলএনজি আমদানি করতে হতো না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কতগুলো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে ক্ষেত্রে নেতৃত্ব যদি ভুল করে বা সরকার যদি ভুল করে, তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন জিডিপি ৮ দশমিক ১ ভাগ। এর কারণ এনার্জিতে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। দাম বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে এটা যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে দুটো পথ আছে—হয় আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যাতে না বাড়ে সে ক্ষেত্রে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জি ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে না। আর সত্যিকার অর্থনীতির উন্নতি চাইলে এটা মেনে নিতেই হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পোন্নয়ন করতে হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে, সার উৎপাদন করতে হবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হবে। কাজেই এলএনজি আমদানি করতে হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে খরচ পড়ে ৬১ দশমিক ১২ টাকা। কিন্তু সরকার দিচ্ছে ৯ দশমিক ৮০ টাকায়।

ভারতে গ্যাসের দাম কমে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের একটি তুলনামূলক হিসাব তুলে ধরে বলেন, ভারতে গৃহস্থালিতে গ্যাসের দাম স্থানভেদে ৩০ থেকে ৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। বাংলাদেশ দিচ্ছে ১২ দশমিক ৬০ টাকায়। শিল্পে দেশে ১০ দশমিক ৭০ টাকায়, ভারতে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। সিএনজি দেশে ৪৩ টাকা এবং ভারতের ৪৪ টাকা। বাণিজ্যিকে ২৩ টাকায় এবং ভারতে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায়। দাম বাড়ানোর পরেও বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম জোটের হরতাল করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমস্ত কর মাফ করে দেওয়া হয়েছে, সবকিছু করে দিয়ে মানুষের কাছে যাতে সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তরপরও উনারা হরতাল করেন, আন্দোলন ডাকেন। খুব ভালো, বহুদিন পর হরতাল পেলেন তো, পরিবেশের জন্য ভালো।’

চীন সফরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন বলেছে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে, দেখবে। তাদের যতটুকু যা করার তা তারা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসম্যান ব্রাড শেরম্যানের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ৫৪ হাজার বর্গমাইল বা ১ লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার, আমরা তাতেই খুশি।’ রাখাইনকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার মতো কথা বলা অন্যায় কাজ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কথা না বলে বরং মিয়ানমার তার নাগরিকদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায়, কংগ্রেসম্যান শ্যারনের সেটা করা উচিত। প্রতিটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। কোনো দেশের মধ্যে গোলমাল পাকানো ঠিক না।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি খুব পরিষ্কার—সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। দেশের উন্নয়নে যে সহযোগিতা রাখবে, সেটাই সরকার দেখবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন