বিটিভির সংবাদ পাঠিকাদের নিয়ে সাংসদের এ কেমন কটূক্তি!

  11-07-2019 09:26PM

পিএনএস ডেস্ক : বিটিভির সংবাদ পাঠিকাদের নিয়ে ‘অশোভন’ মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ মজিবুল হক চুন্নু। বিটিভিতে ‘বুড়া-থুড়া মহিলাদের’ দিয়ে সংবাদ পাঠ করানোর কাজ করা হচ্ছে বলে সংসদ অধিবেশনে কটূক্তি করেন এই সাংসদ। পরে সাংসদের এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

আজ বৃহস্পতিবার সংসদে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন (সংশোধন) বিল ২০১৯’ পাস হয়েছে। এতে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়ার বিধান সংযোজন করা হয়। তথ্যমন্ত্রী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

বিলের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে জাপা সাংসদ মজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘এই বিল পাস হলে দেশে ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হবে এমন নিশ্চয়তা কি মন্ত্রী দিতে পারবেন? বিটিভির অনুষ্ঠান ও সংবাদ পাঠিকার কাজ এমন সব লোককে দিয়ে করা হয় যা অন্য চ্যানেলের তুলনায় মানসম্পন্ন নয়। বিটিভিতে চাকরি করেন এমন কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে এসব অনুষ্ঠান করানো হয়। সংবাদ পড়ানোর জন্য বুড়া-থুড়া মহিলাদের দিয়ে কাজ চালানো হয়।’

মজিবুল হক চুন্নুর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বয়স বেশি না কম; এটা কোনো কাজের মানদন্ড হতে পারে না। কম বয়সী হলেই পারফরম্যান্স ভালো হবে এমন কোনো কথা নেই। এ ধরনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য তিনি স্পিকারের কাছে দাবি জানান।

বিলের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, দেশের চলচ্চিত্রের এখন চরম দুরবস্থা চলছে। একে একে সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। আকাশ সংস্কৃতি এতটা উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধীদলীয় সাংসদ। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের চ্যানেল এখানে দেখা গেলেও আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো ভারত থেকে দেখা যায় না। প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য দেখে। ফলে এগুলোতে নিরপেক্ষ সংবাদ বা অনুষ্ঠান প্রচার হয় না। মানুষ তা দেখে না।

বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান বলেন, তথ্যমন্ত্রী যতটা স্মার্ট, বিটিভি ততটাই আনস্মার্ট। বিটিভির মান মোটেই ভালো না। যেখানে অন্য চ্যানেল দেখা যায় না; সেখানের মানুষই শুধু বিটিভি দেখে।

বিএনপির আরেক সাংসদ মোশাররফ হোসেন বলেন, বিটিভিতে আরও বড় পরিবর্তন এনে একে যুগোপযোগী করে তোলা দরকার। এই প্রতিষ্ঠান সব সময় সরকারি দলের সংবাদ প্রচার করে। বিরোধী দল ও তাদের বিষয়ে কোনো সংবাদ দেখতে পাওয়া যায় না। গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাও বিটিভি দেখেন না। আগ্রাসন ও অপসংস্কৃতির ধাক্কায় দেশীয় চলচ্চিত্র ধ্বংসের মুখে।

যানজটে পড়ে সংসদে আসতে দেরি তথ্যমন্ত্রীর

দিনের কার্যসূচিতে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন (সংশোধন) বিল ২০১৯’ পাসের কথা থাকলেও তথ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তা স্থগিতের ঘোষণা দেন সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। কিন্তু এর পরপরই তথ্যমন্ত্রী সংসদের বৈঠকে প্রবেশ করেন এবং স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মন্ত্রীর অনুরোধে স্পিকার বিলটি উত্থাপনের সুযোগ দেন। বিলের ওপর বিরোধী দলীয় একাধিক সদস্যের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়।

তথ্যমন্ত্রী বিলটি উত্থাপন করতে গিয়ে তার সংসদে প্রবেশে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, যানজটের কারণে সংসদে ঢুকতে তার দেরি হয়েছে। অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়ে সংসদে ফিরতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়েন তিনি।

তার এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, সংসদের কাজের তুলনায় অন্য কোনো কাজ মন্ত্রী বা এমপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। মন্ত্রীর এমন অজুহাতের প্রতিবাদে তিনি বিলের ওপর জনমত যাচাইয়ের বক্তব্য দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।

পরে অবশ্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ফখরুল ইমামের এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, অবশ্যই সবার আগে সংসদের কাজ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনি সংসদ থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে ছিলেন। এক ঘণ্টা আগে রওনা হয়েও তিনি সময়মতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর কারণ যানজট। মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় আজ বৃষ্টি হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন। এ কারণেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন