শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

  18-07-2019 10:30AM


পিএনএস ডেস্ক: পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদে পানিবৃদ্ধির ফলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরনো ভাঙন অংশ দিয়ে বন্যার পানি দ্রুতবেগে প্রবেশ করছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ১ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা। এতে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান কজওয়ের (ডাইভারশন) ওপর দিয়ে হাঁটু সমান উচ্চতায় প্রবলবেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও যেকোন সময় শেরপুর থেকে জামালপুর হয়ে রাজধানী ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। যেভাবে বন্যার পানি বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন।

সকাল ৭টার দিকে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান কজওয়েতে (ডাইভারশন) গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশা চলাচল এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বাস-ট্রাককে ঝুঁকি নিয়ে ডাইভারশনে চলাচল করতে দেখা যায়। অনেক মানুষকে দেখা যায় নৌকায় করে ডাইভারশন অংশটুকু পারাপার হতে। সেখানে কথা হয় সদর উপজেলার নন্দির জোত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বারি মিয়া, কৃষক ফারুক মিয়া ও পোড়ার দোকান এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মোস্তফা মিয়ার সঙ্গে।

তাঁরা বলেন, বুধবার সন্ধ্যায়ও আমাদের এলাকায় পানি ছিল না। হঠাৎ রাত ৮টার দিকে হু হু করে বন্যার পানি এলাকায় ঢুকে পড়ে। এমনকি শেরপুর-জামালপুর সড়কের ডাইভারশনের ওপর দিকে রাতের মধ্যেই হাঁটু পানি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হতে থাকে। বন্যার পানিতে তাদের বীজতলা, সবজি ও পাটের আবাদ তলিয়ে গেছে, বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে। তারা বলেন, যেকোনো সময় ডাইভারশনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বন্যার পানির যে অবস্থা, তাতে এবার প্রবল বন্যা হতে পারে।

এদিকে, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে আরো দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ছয়জনের মৃত্যুর হলো।

জেলা ত্রাণ অফিসের তথ্যমতে, বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের পাঁচ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১৭২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৬৩ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জেলায় ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় ছয় দিন ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় জেলার বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং খামারের মাছ ভেসে এবং পাড় ভেঙে প্রায় পাঁচ কোটি ১৮ লাখ টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম।

বুধবার বিকেলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শেরপুর সদরের কুলুরচর-বেপারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক পরিারের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল, এক কেজি করে চিড়া ও গুড় বিতরণ করে জেলা প্রশাসন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন