ডেঙ্গুতে ১৭২ জনের মৃত্যু

  20-08-2019 02:43AM

পিএনএস ডেস্ক:ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একের পর এক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। যদিও রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রোগটি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

এদিকে রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৭৫৭ ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৫৮ জন ভর্তি। এরমধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এই ছয়জন হলেন—নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার ফাতেমা আক্তার (২১), খুলনার রূপসা উপজেলার খাঁজাডাঙ্গা গ্রামের সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমান (৪০), নেত্রকোনার কেন্দুয়ার আবদুল লতিফের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪০), একই জেলার দুর্গাপুরের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সেলিম হোসেন (২৭), ফরিদপুর সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীচর গ্রামের শেখ শফিউদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৫) এবং পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার ফজলুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৮)। তবে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে সোমবার রাত পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৭২ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের ‘ডেথ রিভিউ’ প্রক্রিয়া শেষ করে এ পর্যন্ত ৪০ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

ডেঙ্গুর দাপটে রাজধানীবাসীর রোজকার জীবনধারাই পাল্টে গেছে। মাসিক বাজারের ফর্দে চাল-ডালের আগে যোগ করতে হচ্ছে অ্যারোসল, কয়েলসহ মশা প্রতিরোধী নানা জিনিসের নাম। ঘরে যেন একটাও মশা না ঢোকে, এই ভাবনা থেকে অনেকে পুরো বাসা নেট দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন। আর এসব জিনিস জোগাড় করতে পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাড়তি টাকা।

আগে যেখানে একটি পরিবার মশা মারতে অ্যারোসলের একটি ক্যানেই মোটামুটি মাস চালিয়ে নিতে পারত, এখন সেখানে তিন বেলাই অ্যারোসল স্প্রে করতে হচ্ছে। একটির জায়গায় অ্যারোসলের ক্যান লাগছে তিন-চারটি, ক্ষেত্রে বিশেষে আরও বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ডেঙ্গুর কারণে বদলে যাওয়া দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এমন চালচিত্রই পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার নিম্নগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা আশা করছি, রোগীর সংখ্যা আর বাড়বে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেঙ্গুবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান, অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।

ডাক্তার সানিয়া তহমিনা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এ সময়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫০ জন। এই ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৫৭ জন এবং ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬ জন। ঢাকার বাইরে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৮৫৮ জন এবং ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ হাজার ৪৪ জন।

এ তথ্য বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক ডা. তহমিনা বলেন, আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে।

তিনি জানান, সারাদেশে সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৭৩৩ জন, যা আগের দিনের তুলনায় ৬ শতাংশ কম।

ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ভর্তি থাকা রোগী সংখ্যা ৩ হাজার ৪১৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছে ৩ হাজার ৩১৪ জন। আগের দিনের তুলনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ কমেছে।

ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, এর মাধ্যমেই আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে অর্থাৎ রোগীর হারে নিম্নগতি। আশা করছি এটা আর বাড়বে না। এটা সম্ভব হয়েছে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং আপামর মানুষ সচেতন হয়েছে বলে।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপতালে আরও ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার রাত থেকে সোমবার বিকেলের মধ্যে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং খুলনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

ঢাকা: স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, ফাতেমা আক্তার নামে ২১ বছর বয়সী এক তরুণী রোববার রাত দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়েটিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তিনি ছিলেন ব্লাড ক্যানসারের রোগী। কয়েক দিন আগে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। আবদুর রশিদ জানান, তার হাসপাতালে সোমবার পর্যন্ত মোট ৩৭১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গুতে ভোগে মিটফোর্ডে এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হলো।

খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, মিজানুর বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সোমবার সকাল ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত খুলনায় এক বৃদ্ধাসহ পাঁচজনের জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জেলার সিভিল সার্জন এএসএম আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খুলনায় সোমবার পর্যন্ত ৫৭৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৯ জন, যাদের ২০ জন সোমবার এসেছেন।

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে সেলিম হোসেন (২৭) নামের এক রোগী গত মঙ্গলবারে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। আর আনোয়ার হোসেন (৪০) নামে আরেক ডেঙ্গু রোগী সোমবার ভোরে মারা যান, যিনি আগের দিন দুপুরে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। লক্ষ্মী নারায়ণ বলেন, আনোয়ার কয়েক দিন নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শরীরের বিভিন্ন অর্গানের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলার কারণে তার মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেলে এ নিয়ে মোট চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল বলে লক্ষ্মী নারায়ণ জানান।

ফরিদপুর: ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, দেলোয়ার হোসেন (৩৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রোববার ভর্তি হন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দোলোয়ারের বাবা শফিউদ্দিন শেখ বলেন, তার ছেলেকে প্রথমে ফরিদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। দেলোয়ার ফরিদপুর শহরের পূর্বখাবাসপুর মসজিদের খাদেম হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জন ভর্তি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফরিদপুরের এ রোগে ভর্তি রয়েছে ৩৪৬ জন রোগী।এ পর্যন্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো বলে কামদা প্রসাদ জানান।

বরিশাল: সোমবার দুপুরে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়া আক্তারের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। সুমাইয়া পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার ফজলুর রহমানের মেয়ে। পরিবারের বরাত দিয়ে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন সুমাইয়া আক্তার। সেখানে শারীরিক অবস্থান অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছিল।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন