কিসের ছাত্রলীগ, সে বিবেচনা করব না : প্রধানমন্ত্রী

  09-10-2019 05:19PM

পিএনএস ডেস্ক :বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারে নিজের অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘কীসের ছাত্রলীগ, সে বিবেচনা করব না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবেই। অপরাধী অপরাধীই।’

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, নিশ্চিত করা হবে সর্বোচ্চ শাস্তি।’

আজ বুধবার নিজের যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফর নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। বেলা সাড়ে তিনটায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তাঁর দুই সফরের বিষয়ে কথা করেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।

সংবাদ সম্মেলনের দ্বিতীয় প্রশ্নটিই ছিল আবরার হত্যা নিয়ে। গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েকজন নেতা। এ হত্যা নিয়ে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি কোনো অপরাধ করে তা কোন দলের কে করে সেটা দেখি না। অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত করি।’

আবরার হত্যাকে ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চা ছেলে, ২১ বছর বয়স। তাকে কী অমানবিকভাবে হত্যা করেছে। পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘটনার পরই ছাত্রলীগকে বলেছি অভিযুক্তদের বহিষ্কার করতে। তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশকে বলেছি, অপরাধীদের ধরতে। অনেকেই ধরা পড়েছে। ছাত্ররা নামার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছে।

আবরার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ পরিবারের ছেলে, এত ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে। তার মায়ের কষ্ট আমি বুঝি। বাবার কষ্ট বুঝি। কারণ আমিও হত্যার বিচার চেয়ে পাইনি। বাবা-মার হত্যার পর ৩৮ বছর আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে ছাত্রদল কে ছাত্রলীগ এ বিবেচনা করব না।

শেখ হাসিনা বলেন, বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে, সকালে জানার পরই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু শুনলাম, পুলিশকে ফুটেজ নিয়ে আসতে দেওয়া হবে না। তখন প্রশ্ন হলো, ব্যাপারটি কী? পুলিশের আইজিপিও বললেন, পুলিশকে ফুটেজ আনতে দিচ্ছে না। ঘিরে রেখেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ফুটেজটা হাতে পাওয়ার জন্য তিনটা ঘণ্টা সময় কেন নষ্ট করল কেন?

আবরার হত্যার পর আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আবার কীসের আন্দোলন। কোনো দাবি তো সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা যায় না। অপরাধীদের ধরা চলছে।

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বুয়েট চাইলে নিষিদ্ধ করতে পারে। তাদের সিনেট আছে, এটা করতে পারে। তবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিতে হবে এটা স্বৈরাচারদের কথা। আমি নিজে ছাত্র রাজনীতি করে উঠে এসেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বুয়েটে আমাদের একাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে। কয়টার বিচার হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর আট দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে আবার চার দিনের সফরে ভারত যান। ৩ থেকে ৬ অক্টোবর তিনি ভারত সফর করেন।

আজ শুরুর প্রশ্নটাই ছিল ত্রিপুরায় এলপিজি ও ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরাকে দেওয়ার বিষয়ে সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়ে।

এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এলপিজি প্রাকৃতিক গ্যাস নয়। আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না। আমরা যে অপরিশোধিত তেল কিনে নিয়ে আসি এর বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে একটা অংশ এলপিজি হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে ১৮ কোম্পানি উৎপাদন করছে এলপিজি। ত্রিপুরায় যাবে এলপিজি। ২০০১ সালে বিএনপি মার্কিন প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেছিলেন। ভারতের কাছে সেই গ্যাস কিনবেন। এ কথার কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন যারা গ্যাস বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির অনুমতি দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে তা হতে পারে না।

ফেনী নদীর পানি দেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ত্রিপুরার সাবরুমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পরে। চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি নেবে।
কেউ যদি পানি পান করতে চায়, তা যদি না দিই তা কেমন দেখায়?

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে বলেছিলেন, ফারাক্কা চুক্তির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। যারা গঙ্গার মতো পানির কথা ভুলে যায় তারা আবার ফেনী নদীর পানি নিয়ে কথা বলে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শেখ হাসিনা ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সফরের সময় ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে বক্তব্য দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এর পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

প্রধানমন্ত্রী আইসিসি কৌঁসুলি ফাতোউ বেনসোউদা, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেটস, জাতিসংঘ মহাসচিবের উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন বিষয়ক বিশেষ দূত রানি ম্যাক্সিমা ও গ্লোবার হোপ কোয়ালিশনের অনারারি প্রেসিডেন্ট ইরিনা বোকোভার সঙ্গেও বৈঠক করেন।

শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় ৫ অক্টোবর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে তিনটি দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ সময় তাদের উপস্থিতিতে সাতটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়।

ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ রোববার তাজমহল হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন