মেট্রোরেল ১ ও ৫ নির্মাণে ‘দ্বিগুণ’ ব্যয়

  16-10-2019 01:49AM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীবাসী দেখছেন আর দেশবাসীর অনেকেই জানেন, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল সিটি সেন্টার পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে। ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি লাইন- ৬)’ নামে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলিভেটেড মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ ২১ হাজার টাকা।

‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন- ৫) : নর্দান রুট’ প্রকল্পের আওতায়ও নির্মাণ করা হবে ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন। এমআরটি লাইন- ৬ এর প্রায় সমান হলেও এমআরটি লাইন- ৫ নির্মাণে খরচ হবে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এমআরটি লাইন- ৬ এর তুলনায় এমআরটি লাইন- ৫ নির্মাণে প্রায় দ্বিগুণ খরচ ধরা হয়েছে।

আবার ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন- ১)’ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এমআরটি লাইন- ৫ ও এমআরটি লাইন- ১ নির্মাণ ব্যয় প্রায় কাছাকাছি। তবে তা এমআরটি লাইন- ৬ এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

অর্থাৎ এমআরটি লাইন- ৬ নির্মাণে প্রতি ১০ কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এমআরটি লাইন- ৫ ও ১ নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রতি ১০ কিলোমিটারে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

প্রথমটির (এমআরটি লাইন- ৬) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ খরচ ধরে ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন- ১)’ ও ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন- ৫) : নর্দান রুট’ মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প দুটি আজ (১৫ অক্টোবর) অনুমোদন দেয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির একনেক সভায়।

একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রকল্প দুটি যাচাই-বাছাই করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এ বিভাগের সদস্য (সচিব) শামীমা নার্গিসও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা বিভাগের সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের অন্য সদস্যরাও (সচিব) সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক সংবাদকর্মী প্রশ্ন রাখেন, ভারতের মেট্রোরেলের চেয়ে আমাদের মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি। বিভিন্ন গণমাধ্যম এটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। ভারতের চেয়ে আমাদের মেট্রোরেলের ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ কী?

জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের সরকার মানবিক সরকার। একে তো ভারতের তুলনায় আমাদের জমির দাম বেশি, জমির বর্তমান মূল্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি মূল্য আমরা দেই। এতেই খরচ অনেক বেড়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের (জমির মালিক) পুনর্বাসন করি। তাদের সন্তানদের পড়ার ব্যবস্থা করে দেই, চাকরির ব্যবস্থা করে দেই। পৃথিবীর খুব কম দেশই এটা করে।’

প্রকল্প থেকে জানা যায়, এমআরটি লাইন- ৫ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং পুনর্বাসনে ২৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা যথাক্রমে মোট খরচের ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এমআরটি লাইন- ১ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ/পুনর্বাসনে ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। যা মোট খরচের ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের মেট্রোরেলের খরচ কম বা বেশি, বেশি হতে পারে। ভারতের এমআরটি লাইন তৈরির হিসাব এ মুহূর্তেরটা ধরা হলো নাকি ১০ বছর আগেরটা ধরা হলো, এ বিষয়টি জানানো হলো না। আমাদের অনেকগুলো স্টেশন চলে যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। যখনই আন্ডারগ্রাউন্ডে হবে, তখন আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি খরচ লাগবে এলিভেটেডের চেয়ে। কাজেই মেট্রোরেলের খরচ বাড়ার অনেক কারণ আছে।’

প্রকল্প থেকে জানা যায়, এমআরটি লাইন- ১ এর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২১৫ কিলোমিটার পাতাল (আন্ডারগ্রাউন্ড) মেট্রোরেল এবং কুড়িল থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার এলিভেটেড মেট্রোরেল হবে। এমআরটি লাইন-৫ এর আওতায় হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলিভেটেড মেট্রোরেল এবং আমিনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার পাতাল (আন্ডারগ্রাউন্ড) মেট্রোরেল হবে।

এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) শামীমা নার্গিসের বক্তব্য কী, তা জানতে চাওয়া হয়।

শামীমা নার্গিস বলেন, ‘কেন দাম বেশি, এ ব্যাখ্যা মুখস্ত করে রাখা সম্ভব নয়। জমি অধিগ্রহণের খরচসহ সবকিছু ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) বিস্তারিত দেয়া আছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী এগুলো জেনেই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সামনে যে উপস্থাপনাটা হয়, তখন কিন্তু সব আইটেম ধরে ব্যয় দেখানো সম্ভব হয় না। আইটেম ধরে আমরা কাজ করি পিইসি সভায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পে কোথাও আন্ডারগ্রাউন্ডে যাচ্ছে, আবার কোথাও লাইন ট্রানজিশন দরকার হচ্ছে, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে যখন এলিভেটেড যাবে, তখন আমাদের পরামর্শক ব্যয়, টেকনিক্যাল গ্যাপ, এটা তৈরি করার পরও তো তা পরিচালনা করতে হবে। আমাদের যে লোকবল এগুলোকে অপারেট করবে, সেই খরচটাও কিন্তু এর মধ্যে ধরা আছে। একই সাথে তাদেরকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। সব প্রশিক্ষণ কিন্তু বাইরের নয়, বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।’

এমআরটি লাইন- ৬ ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। আর এমআরটি লাইন- ৫ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরে এবং এমআরটি লাইন- ১ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনটি প্রকল্পই সড়ক পরিহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ প্রদান করছে।

এমআরটি লাইন- ৬ নির্মাণে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ ২১ হাজার, এমআরটি লাইন- ৫ নির্মাণে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার এবং এমআরটি লাইন- ১ নির্মাণে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা।

পিএনএস/ হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন