অবশেষে কাউন্সিলরের পদ হারাচ্ছেন সাঈদ

  17-10-2019 04:57PM

পিএনএস ডেস্ক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমিনুল হক ওরফে সাঈদকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ইতিমধ্যে তাঁকে বরখাস্তের নথি অনুমোদন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে আওয়ামী যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক বিতর্কিত এই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেনি যুবলীগ। ক্যাসিনো–বাণিজ্যে জড়িত থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেনি পুলিশ।

ডিএসসিসির অভিযোগ, মমিনুল হক ডিএসসিসির বোর্ড সভায় নিয়মিত যেতেন না। ডিএসসিসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অসংখ্যবার বিদেশে গেছেন। এখনো তিনি সিঙ্গাপুরে আছেন। তাই মমিনুল হককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। র‍্যাব ও মতিঝিল থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, এই চারটি ক্লাবের মধ্যে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি চালাতেন যুবলীগের নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক। এই ক্লাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসত। তবে র‍্যাবের অভিযানের কয়েক দিন আগেই তিনি সিঙ্গাপুরে চলে যান।


স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডে মমিনুল হকের ক্যাসিনোর ব্যবসা আছে। প্রতি মাসেই তিনি বিদেশে যাওয়া-আসা করেন। ফকিরাপুল ও আরামবাগের অনেকেই তাঁকে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামে চেনেন। ক্যাসিনো ছাড়াও যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ মমিনুলের চাঁদাবাজি থেকে টেন্ডারবাজি—সবকিছুতেই একক আধিপত্য ছিল।

ডিএসসিসির সচিবের দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৮টি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৩টি বোর্ড সভায় মমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, পরপর তিনবার বোর্ড সভায় অনুপস্থিতি কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ এবং অসদাচরণের শামিল। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া কাউন্সিলরদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু ডিএসসিসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অসংখ্যবার বিদেশে গেছেন মমিনুল হক। পরে গত ২৫ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে ডিএসসিসি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএসসিসির চিঠি পাওয়ার পর গত ৭ জুলাই মমিনুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এর কিছুদিন পর তিনি জবাব দেন। পরে বিষয়টি তদন্তের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) এম ইদ্রিস সিদ্দিকীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে তাঁর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে মমিনুল হকের বিরুদ্ধে ডিএসসিসির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদনে মমিনুল হকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই তাঁকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকালই বরখাস্তের নথি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সিদ্ধান্তের বিষয়টি ডিএসসিসিকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।

ব্যবস্থা নেয়নি যুবলীগ: মতিঝিল ও বনানীর ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকায় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ অনেক বিতর্কিত নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে যুবলীগ। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুগ্ম সম্পাদক পদে বহাল আছেন মমিনুল হক। ফলে তাঁর পদে থাকা নিয়ে দলটিতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক নেতা বলেন, সাধারণত যাঁরা র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদেরই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মমিনুল হক বিদেশে থাকায়, তাঁর বিষয়টি অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। সংগঠনের স্বার্থে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার এখনই সময়। এ বিষয়ে জানতে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

মমিনুল হকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি: জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় ১০ লাখ টাকা, ক্যাসিনো ও জুয়ার সরঞ্জাম, সাড়ে ২০ হাজার টাকার জাল নোট, বিপুল পরিমাণ মদ ও মাদক জব্দ করেছিল র‍্যাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্যাসিনো পরিচালক মমিনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‍্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ক্লাবটিতে অভিযানের আগেই সবাই পালিয়ে গেছেন। ফলে কাউকে হাতেনাতে ধরা যায়নি। তাই কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। কিন্তু জব্দ করা মালামাল কী করা হয়েছে, তার হিসাব নেই।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, মমিনুল হকের বিরুদ্ধে তাঁর থানায় কোনো মামলা নেই। র‍্যাব-৩–এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারাও একই কথা বলেছে।- প্রথম আলো

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন