গণমাধ্যমজুড়ে শুভঙ্করের ফাঁকি- ৬

  11-11-2019 03:33PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : কদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের জন্য পেনশন চেয়ে একটি যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য। কিন্তু এতে হাতে গোনা কজন ছাড়া বেশির ভাগই সাংবাদিকই উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, যারা বেতনই দেয় না; তারা দেবে কিনা পেনশন। এতে আস্থাহীনতাই প্রাধান্য পায়।

রাজধানী ঢাকায় কর্মরতদের কথা এতদিন লিখছিলাম। এর বাইরের অবস্থা খুবই করুণ।ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদি আর এক সময়ের দৈনিক বার্তা ছাড়া নিয়মিত এবং ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা সাংবাদিক-কর্মচারীরা পান- সেটা কেউ হলফ করে বলতে পারবে না।ব্যতিক্রম দুয়েকটি থাকতে পারে। হয়তো কালেভদ্রে কেউ নামমাত্র বেতনের কিছুটা দেন।

মফস্বল থেকে যারা ঢাকার জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন, তাদের মধ্যে প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, সমকাল, সময়ের আলো, বাসস, ইউএনবি, যুগান্তর, ইত্তেফাক, নয়াদিগন্ত, ডেইলি স্টার, নিউএজ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দেশ রূপান্তর, ইটিবি, এনটিভি, ইন্ডিপেনডেন্ট, বাংলাভিশন, মাছরাঙ্গা, নিউজ টুয়েন্টি ফোর, চ্যানেল আইসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কিছুটা বেতন-ভাতা পান।

এগুলোর বাইরের বেশির ভাগ গণমাধ্যমে মফস্বলে কর্মরতরা সংগ্রহ করে পাঠানো বিজ্ঞাপনের উপর কমিশন দ্বারা ব্যুরো অফিস ও নিজের খরচ মিটান।এভাবে তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। অথচ মফস্বলে পেশাগত দায়িত্ব পালন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কারো ব্যাপারে কোনো সংবাদ প্রকাশ পেলে সরাসরি আঘাত চলে আসে চেনাজানা এবং কাছে থাকা ওই সাংবাদিকের উপর।

ঢাকার মতো মফস্বলের সাংবাদিকরা যেহেতু তেমনটা সংঘটিত নয়, সেহেতু তাদের পক্ষে সম্মিলিতভাবে এসব সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন।ফলে অনেকেই খুনিদের হাতে জীবন দেন। এভাবে শামসুর রহমান কেবল, হুমায়ুন কবীর বালু, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাইফুল আলম মুকুল, শেখ বেলালউদ্দিন আহমেদ, মির ইলিয়াস হোসাইন, নাহার আলি, হারুনুর রশিদ, শুকুর হোসাইন, সৈয়দ ফারুক আহমেদ, মানিক সাহা, কামাল হোসেন, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, শহীদ আনোয়ার, সুবর্ণা নদী, আবদুল হাকিম শিমুল, গৌতম দাসের মতো অসংখ্য সাংবাদিক উপজেলা, জেলা ও মহানগরে পেশাগত কারণে প্রাণ হারান।

অনেকের বিচারও আলোর মুখ দেখেনি।যেমন দেখেনি রাজধানী ঢাকায় শয়নকক্ষে খুন হওয়া সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতির বিচার। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো সাংবাদিকের বিচারের জন্য এত আন্দোলন-সংগ্রাম ও দাবি জানানো হয়নি। পেশাগত সহকর্মীরাসহ দেশের সর্বস্তরের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সবার মুখে জোরালো দাবি সত্ত্বেও কী এক রহস্যজনক কারণে এটি গতি পাচ্ছে না, উদ্ধার হচ্ছে না হারিয়ে যাওয়া লেপটপটি।

এতকিছুর পরও মামলাটি গতি না পাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা ও সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনা আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে। অপরাধীরা হয়তো ভাবছে, এতকিছুর পরও যখন সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতির বিচার হচ্ছে না, তাই আমি হামলে পড়লে কী আর হবে। ফলে পান থেকে চুন খসলেই যে কউ সাংবাদিকদের একহাত দেখাতে মোটেও দুবার ভাবছে না। এতে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকরা চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সাংবাদিকরা বড় আশা নিয়ে এ পেশায় আসেন। কিন্তু নিয়ম না-মানা মালিকপক্ষের বঞ্চনায় তারা সমাজে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।ফলে সমস্যাগ্রস্তরা নিজেদের ভালো, মঙ্গল ও কল্যাণে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য উত্তাপিত প্রস্তাবকেও স্বাগত জানাতে পারেন না। কথায় আছে, চুন খেয়ে যার গাল পুড়েছে, সে দধি দেখলেও ভয় পায়।পেশাদার সাংবাদিকদের আজকের বাস্তবতা অনেকটা তাই।
চলবে-

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন