সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

  20-11-2019 05:04PM

পিএনএস ডেস্ক : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলছে। অঘোষিত এই ধর্মঘটে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ বেশিরভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার পরিবহন ধর্মঘটের খবর তুলে ধরা হলো-

নারায়নগঞ্জ: পরিবহন শ্রমিক আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর পয়েন্টে এবং নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। বুধবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে যান চলাচলে বাধা দেয়। এসময় কোনও যানবাহন চলাচল করতে গেলেই শ্রমিকরা ওই পরিবহনের চালকের ওপর হামলা করে।

কুমিল্লা: সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে বুধবার যুক্ত হয়েছে কুমিল্লা জেলা। সকাল থেকে কুমিল্লার সঙ্গে ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনীসহ আন্তজেলা ও অভ্যন্তরীণ সড়কে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসসহ সকল যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। আজ ভোরে কুমিল্লা থেকে যাত্রী নিয়ে এশিয়া ও তিশা পরিবহনের গাড়ি ঢাকায় যাওয়ার পথে চিটাগাং রোড অতিক্রম করার পর ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও সকাল ১০টার পর মহাসড়কের আরও কিছু স্থানে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকামুখীসহ জেলা থেকে অন্যান্য সড়কেও গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

খুলনা: সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো খুলনায় ধর্মঘট পালন করছে চালক ও শ্রমিকরা। আজও খুলনা থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। অভ্যন্তরীণ বেশিরভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। এ অবস্থার যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে বাগেরহাট, কাটাখালী ও গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন।

গাজীপুর: গাজীপুর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের বাস এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে কোনো পরিবহন রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি। এতে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাস্টারবাড়ি এলাকায় কিছু পরিবহন শ্রমিক বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করে তাদের উল্টো দিকে ফিরিয়ে দেন। তাদের মধ্যে পরিবহন শ্রমিক এমরাত হোসেন বলেন, কোনো নেতার নির্দশে নয়, আমরা নিজেরাই বাস চালানো থেকে বিরত রয়েছি। নতুন পরিবহন আইন বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

কুড়িগ্রাম: সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে কুড়িগ্রাম থেকে সব রুটে বাস, মিনিবাস ও ট্রাক-ট্যাংকলরিসহ সব গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে তৃতীয় দিনের মতো পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গত ২ দিন স্থানীয় রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও আজ থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সকাল থেকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, আরাপপুর, বাইপাস মোড় এলাকায় বাস ও যানবাহনের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকে বাস না পেয়ে ইজিবাইক ও মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহনে চলাচল করছেন।

চট্টগ্রাম: নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চালাচ্ছে না চালক ও শ্রমিকরা।আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মনির আহমদ বলেন, ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি মানা না হলে চালক ও শ্রমিকরা গাড়ি চালাবে না বলে জানিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা: নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় তৃতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। প্রথম দিকে বাস ধর্মঘট শুরু হলেও আজ বুধবার সকাল থেকে একই দাবিতে শুরু হয়েছে ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট। আজও চুয়াডাঙ্গা থেকে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা রুটে সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কাঁচামাল ব্যবসায়ীরাও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘট না ডাকলেও জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। বুধবার সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে কয়েকটি বাস ছেড়ে যাওয়ার পর কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাধার কারণে বাসগুলো সেখানে যাত্রী নামিয়ে ফিরে এসেছে। সকালে জেলা শহরের পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েকটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কিন্তু বাসগুলো ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে। এরপর বাধ্য হয়ে যাত্রীদের সেখানে নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসে বাসগুলো। কিছু বাসের টিকিট বিক্রি করার পর যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এর ফলে শহরের ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল ও সরাইল-বিশ্বরোড বাসস্ট্যান্ড থেকেও বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।

সাতক্ষীরা: নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সাতক্ষীরায় তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘট পালন করছে শ্রমিকরা। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বুধবার সকাল থেকে কোনও বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটের সব বাস চলাচলও। বাস চলাচল বন্ধে বিপাকে পড়েছেন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা।

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ রেখেছে চালক ও শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকারীরা। তবে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের দাবি- চালক ও শ্রমিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছেন। এতে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। বুধবার সকাল থেকে রাজবাড়ীর আঞ্চলিক সড়কে কোনো যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়ানি। রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো বাস।

রংপুর: নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে রংপুরে সড়কে অবস্থান নিয়েছে ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চালকরা। সকাল থেকে নগরীর আরকে রোডের ট্রাক টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করছেন তারা। ফলে সড়কে বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোসহ পণ্য ও যাত্রীবাহী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে বুধবার সকাল থেকে ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। লালমনিরহাট জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বুলবুল মিয়া বলেন, বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে চলাচল করা সম্ভব নয়। তাই চালকরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে ধর্মঘট শুরু করেছেন।

ময়মনসিংহ: দ্বিতীয় দিনের মতো ময়মনসিংহে থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সব সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ময়মনসিংহের আন্তজেলা বাস টার্মিনাল মাসকান্দা থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। গতকাল অভ্যন্তরীণ সড়কে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বুধবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ সড়কেও বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালক ও শ্রমিকরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছের যাত্রীরা।

সিলেট: বুধবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা দেশব্যাপী পণ্য পরিবহন ধর্মঘট সিলেটেও চলছে। তবে সিলেটে যাত্রীবাহী সব ধরনের পরিবহন চলাচল করছে। বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় নগরের কদমতলিস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাক-পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিকরা ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং করছেন। কেউ পণ্যবাহী গাড়ি চালালে বাধা দিচ্ছেন। তবে বাসসহ গণপরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে স্বাভাবিক দিনগুলোতে মতিঝিলে মানুষের উপস্থিতি থাকে ব্যাপক। ভীড়ের কারণে ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটতেও পারেন না। সড়কে পরিবহনের জটলা থাকে দীর্ঘসময় ধরে। ব্যাংকগুলোর সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ ধর্মঘটের কারণে মতিঝিল এলাকায় আজ তেমন কিছুই চোখে পড়েনি। ফুটপাত দিয়ে আগের মতো মানুষ হাঁটছে না। ব্যাংকগুলোর সামনে দু’একটি ছাড়া কোনো তেমন গাড়িও নেই। অল্প কিছু রিকশা চলছে। ব্যাংকগুলোর ভেতরেও লোকজন তেমন দেখা যায়নি।

একই অবস্থা দেখা গেছে, প্রাইম ব্যাংকের বিজয়নগর ব্রাঞ্চে। সেখানে মাত্র ৭ জন গ্রাহককে দেখা গেছে। অথচ ওই শাখায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ।

সড়কে খিলগাঁও থেকে মিরপুরগামী বাহন পরিবহন, মতিঝিল থেকে সাভারগামী ওয়েলকাম পরিবহন, মতিঝিল থেকে মিরপুরগামী বিকল্প পরিবহন, উত্তরাগামী ঢাকার চাকা পরিবহন ও বিআরটিসির বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এসব বাসেও যাত্রী সংখ্যা অনেক কম দেখা গেছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন