বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য উন্মুচন জরুরি

  14-12-2019 01:15PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আজ শোকাবহ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। একাত্তর সালের এদিনে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন আজ। এ দিনই বেছে বেছে তাদের খুন করা হয়, যারা মেধা, মনন ও অভিজ্ঞতায় ছিলেন খুবই উঁচুমানের ও সমৃদ্ধ। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধায় যাদের স্মরণে করছে।

কঠিন সময়ে দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নানা দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতার হাত প্রসাররিত করা সমাজের উঁচু তলার এবং জাতির গর্বিত সন্তানদের সেদিন কে বা কারা খুন করেছে, সেটার একটা কিনারা হওয়া অতীব জরুরি। যাদের হারিয়ে জাতি সেদিন একরকম দিশেহারি ছিল। ফলে এটিকে একটি গভীর ষড়যন্ত্র মনে করছেন দেশপ্রেমিকরা।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, স্বাধীনতার সূর্য যখন উদিয়মান, জীবন বাজি রাখা ৯ মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর সফলতা যখন ধরা দেয়ার দ্বারপ্রান্ত- এমন একসময়ে দেখে, দেখে, বেছে বেছে যাদের হত্যা করা হয়- তারা ছিলেন অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা। সমাজের এলিট শ্রেণীর। তাদের হত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করে খুনিরা। যাদের চিহ্নিত করে বিচার মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি সর্বস্তরের মানুষের।

নানা ধরনের অনিয়ম-অব্যস্থাপনা, দুর্নীতি, লুটপাট, রাহাজানি সত্ত্বেও দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, তা তো অস্বীকার করা যাবে না। এটা করা হলে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হবে। সত্যকে অস্বীকার করা নিশ্চয় বাহাদুরি নয়। সেদিন যদি ওই অগ্রসর মানুষগুলোকে আমাদের মাঝ থেকে সরিয়ে দেয়া না হতো, তাহলে আমরা আরো এগিয়ে যেতাম নিঃসন্দেহে। আমাদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতির পথে যা বড় বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় সে সময়ে।

মূলত সেদিন যাদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রসর মানুষ। যাদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম ছিল প্রশ্নাতীত। অনেক বেশি জানা এবং অগাধ দেশপ্রেমই তাদের জন্য কাল হয়। আমাদের সে গুণীজনদের কথা জাতি যে ভুলে যায়নি, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস জাতীয়ভাবে পালন এর অন্যতম প্রমাণ।

রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। তাদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়ানো হয়। মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, আবৃত্তি, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ব্যাপারটি নিয়ে আজও নানা ধরনের সন্দেহ ও প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। যে প্রশ্নগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি। এর একটি হলো, বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে, শত্রুবাহিনী যখন পলায়নপর ছেড়ে দে মা কাঁদি বাঁচি অবস্থায় তখন তাদের বিা তাদের দোসরদের দ্বারা এমন নারকীয় পৈশাচিক ঘটনা কী করে সম্ভব? এ প্রশ্ন করে আসছে একটি মহল। আবার স্বাধীনতা বিরোধীদের দায়ী করছে একটি মহল। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের উপর দোষ চাপিয়ে তৃতীয় কোনোপক্ষ এমন নির্দয় ও জঘন্য কাজটি করার সুযোগ নিতে পারে। নির্মম ঘটনাটির পেছনে যাদেরই হাত থাকুক না কেন, তাদের মুখোশ উন্মুচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা সময়ের দাবি। সে দাবি পূরণে সময়ক্ষেপণ না করে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। জরুরি এ কাজটা যত দ্রুত করা যাবে, জাতি তত দ্রুতই অপরাধ বোধ থেকে নিষ্কৃতি পাবে।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন