দাদাদের মিষ্টি কথায় ভুললে চলবে না

  15-12-2019 03:45PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ভারতে সদ্য পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে স্বাক্ষর করেছেন সে দেশের রাষ্ট্রপতি। এটি কার্যকরে এখন আর কোনো বাধা থাকল না। চরম ‍বিতর্কিত ও সাম্প্রদায়িকতার কীড়নক এ আইনটি কার্যকরের মধ্য দিয়ে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশটির সংখ্যাঘলুদের অধিকার, মর্যাদা মানবাধিকার, মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক অধিকার নিরাপদ নয়।

বিতর্কিত এ আইনটি পাস হওয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স। তারা আইনটি পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বসহ তুলে ধরেন। আইনটি পাসের পর ভারতজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিবেকের তাড়নায় সে দেশের মৌলিক মানবাধিকারে বিশ্বাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। পালন করছেন নানা কর্মসূচি। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইতিমধ্যে অর্ধডজন মানবতাবাদীও প্রাণ হারান।

বৈষম্যমূলক এ আইনটি ঠেকানোর জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দিযেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রধান দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ভারতে সদ্য পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রথম চালু হবে এ রাজ্যে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে। আর এটি ঠেকানোর ক্ষমতা মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের নেই বলে তিনি দম্ভোক্তি করেন।

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনকে মুসলমানদের জন্য বৈষম্যমূলক হিসেবে বর্ণনা করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর। আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনটি মৌলিক চরিত্রের দিক দিয়েই বৈষম্যমূলক এবং এ বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

জেরেমি লরেন্স আরো বলেন, আমরা জানি যে এই আইনের বৈধতা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং আমাদের আশা, মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, আদালত তা বিবেচনায় নিয়ে নাগরিকত্ব আইনটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ভারতের বর্তমান সরকার মুসলিম বিদ্বেষী বৈষম্যমূলক আইনটি পাসের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী নিজেদের চরম সাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিতি শতভাগ নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে এই আইনে। কিন্তু এই আইন থেকে মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে. সে দেশে বসবাসকারী মুসলমানদের মৌলিক ও মানবাধিকারের প্রতি তারা মোটেও শ্রদ্ধাশীল নয়। এটাকে জাতিগত নিধন হিসেবে দেখছেন মানবাধিকারে বিশ্বাসীরা।

কথায় আছে, কয়লা ধু্ইলেও ময়লা যায় না। ভারতের বর্তমান সরকার-প্রধান চরম হিন্দুত্ববাদী। এককালে যার নেতৃত্বে দাঙ্গা হয় এবং অসংখ্য মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের ঘোষণা থেকে যার সূত্রপাত। মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে যারা ধর্ম দিয়ে বিচার করে, এমন লোকটি ক্ষমতা পেয়ে স্বদেশী নাগরিকদের সমূলে নির্মূলে আইন করেছেন। যে আইনটি জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

আমাদের জন্য আশঙ্কার কারণ হলো, ভারত এ আইনটি পাসের পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা চলছে। দিনকে দিন এটা বাড়ছে। এ্ স্রোত আরো বাড়তে পারে এবং এর চরম মাসুল বাংলাদেশকে দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অভিজ্ঞ মহল। তাই দাদাদের মিষ্টি কথায় না ভুলে বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে অধিক সতর্ক হতে হবে। সীমান্তে নিতে হবে অধিক সতর্কতা। নির্মাণ করতে হবে, মজবুত দেয়াল অথবা শক্তপোক্ত কাঁটাতারের বেড়া। সময়ের এক ফোড় অসময়ের দশ ফোঁড়ের চেয়ে উত্তম ভেবে এ কাজটি দ্রুত শুরু করা অতীব জরুরি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন