হাসপাতালে পৃথক ইউনিট চালুর নির্দেশ

  27-01-2020 09:57PM

পিএনএস ডেস্ক : চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস যেন বাংলাদেশে সংক্রমিত না হয়, সে জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে পাঁচ শয্যার 'আইসোলেশন ইউনিট' চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের রোগী শনাক্ত হলে তাদের আলাদা করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে চিকিৎসা দিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ইউনিটে সার্বক্ষণিক অপিজেন রাখার পাশাপাশি সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। প্রতিটি বন্দরে বাড়তি মেডিকেল টিম পাঠানো হচ্ছে।

চীনে মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ এ ভাইরাস ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে মঙ্গোলিয়া। গতকাল সোমবার একদিনের ব্যবধানে চীনের হুবেই প্রদেশে মারা গেছেন ২৪ জন। শুধু এ প্রদেশেই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৬। প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপরাজ্য হ্যানানে। দেশটিতে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ জনে। চীনের বাইরে অন্তত ১৩টি দেশে করোনাভাইরাসে ৫৫ জন আক্রান্ত হলেও এসব দেশে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকের জন্য চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরস আদহানম গেবরেসুস।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চীন থেকে এ পর্যন্ত দেশে আসা প্রায় আড়াই হাজার যাত্রীকে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে; কিন্তু কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া চীন থেকে দেশে আসার পর দু'জন জ্বরে আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। এর পরও এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়ছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন ও জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কসহ সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক আদেশে সব হাসপাতালে পাঁচ শয্যা করে পৃথক ইউনিট চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ইউনিটে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর জন্য সার্বক্ষণিক অপিজেন এবং অন্যান্য সুবিধা রাখতে বলা হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া আদেশে আরও বলা হয়, চীনে একটি নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

এর আগে সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরকারি হাসপাতালের পরিচালক, বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জনদের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য করণীয় সম্পর্কে তাদের দিকনির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে দেশের সব বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে বিশেষ মেডিকেল টিম বন্দরগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার মেশিন দিয়ে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হবে। এরই মধ্যে ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পৃথক ইউনিট চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশেই পাঁচ শয্যার পৃথক ইউনিট চালু হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীরা সেখানে সেবা পাবেন।

একদিনের ব্যবধানে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৪৪ জনে। তবে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেইজিংয়ে ৯ মাসের একটি শিশু আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে শিশু আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। আক্রান্তদের বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানসহ অন্যান্য শহরের। উহানের সামুদ্রিক খাবার ও পশুর বাজার থেকেই নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সোমবার উহান সফর করে রোগী ও চিকিৎসকদের খোঁজখবর নিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খেকিয়াং। সোমবার থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত উহানের ভিসা ও পাসপোর্ট সেবা বন্ধ থাকবে। এমন অবস্থায় চীনের সরকার নতুন বছরের ছুটির সময়সীমা ৩০ জানুয়ারি বদলে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। বেশ কিছু বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এশিয়ার বড় বড় শেয়ারবাজারের সূচক সোমবার নিম্নমুখী ছিল। পড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দামও।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন