কথিত স্বামীর পাঠানো কার্ডে টাকা তুলে....!

  18-02-2020 03:21PM

পিএনএস ডেস্ক: দুবাই থেকে কথিত স্বামী জসিমউদ্দিন রাজুর পাঠানো সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তুলে ফেঁসে গেছেন তানিয়া আক্তার নামের এক তরুণী। গত বছর ঢাকার বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে তিনি ১৩ লাখ টাকা তোলেন। পরে রাজুর দেওয়া তিনটি ব্যাংকের ৪ থেকে ৫টি অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো জমা দেন তানিয়া। এই কার্ডের মালিক দুবাইপ্রবাসী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. মামুন কার্ডটি দুবাই থেকে চুরি করে বন্ধু রাজুকে দেন। কার্ডের পাসওয়ার্ড জানা ছিল মামুনের। পরে রাজু কার্ডটি বাংলাদেশে থাকা কথিত স্ত্রী তানিয়াকে পাঠান।

এরপর গত বছরের ৭ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট বিভিন্ন সময় রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক এলাকার কয়েকটি বুথ থেকে ১৩ লাখ টাকা তোলেন তানিয়া। ওইসব বুথের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখা যায়, তানিয়া কখনো বোরকা পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে; কখনো ঘোমটা দিয়ে টাকা তুলেছেন। টাকা তোলার মাস দুয়েক পর সাইফুল বাংলাদেশে এসে অ্যাকাউন্টে টাকা না পেয়ে ৬ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। টাকা তুলে নেওয়া ব্যক্তি শনাক্তে সহায়তাকারীকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাও দেন।

সাইফুলের মামলায় সাউথইস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার একটি বাসা থেকে তানিয়াকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। রাজু দেশের বাইরে থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের শুটিং ইনসিডেন্ট টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আশরাফউল্লাহ বলেন, ‘ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তানিয়ার আগে গত ২৪ জানুয়ারি মো. মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ১৫ জানুয়ারি দুবাই থেকে দেশে আসেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা মামুন অস্বীকার করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তানিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন- মামুন কার্ডটি রাজুকে দেন। তিনি রাজু থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পান। পিনকোড পান হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। কার্ড দিয়ে রাজু এটা তার ভাইয়ের কার্ড, ভবিষ্যতে ভাই তাকে খুঁজতে পারেন বলে জানান। টাকা তোলার সময় ঘোমটা বা চেহারা আড়াল করার পরামর্শ দেন। সেভাবেই কার্ড দিয়ে তানিয়া টাকা তোলেন এবং রাজুর দেওয়া বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে দেন তানিয়া। এই টাকার ১৫ হাজার পাওয়া গেছে, বাকিটা খরচ করেছেন তিনি। তানিয়া বুঝতে পেরেছিলেন টাকাটা হয়তো রাজুর না। কিন্তু এটা কার টাকা, তা জানতেন না এবং ভবিষ্যতে মামলা হবে তাও ধারণা করতে পারেননি তানিয়া।’


রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে সাইফুল উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল দুবাই থেকে বাংলাদেশে এসে ফের ৯ মে ফিরে যাই। ডেমরার সারুলিয়া শাখায় সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে আমার একটি ডেবিট কার্ড ছিল। সেই কার্ডে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৭ মে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করি। দুবাই গিয়ে আমি অ্যাকাউন্টে ১৩ লাখ টাকা জমা করি। পরে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর দেশে ফিরে টাকা তুলতে গিয়ে মানিব্যাগে কার্ডটি পাইনি। পরে অ্যাকাউন্ট চেক করে সেখানে কোনো টাকা পাইনি। পরে সাউথইস্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করলে, তারা ২০১৯ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত আমার ডেবিট কার্ড দিয়ে ১৩ লাখ টাকা তোলার তথ্য দেন।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত তানিয়ার কোনো খবর নেননি কথিত স্বামী রাজু। এমনকি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। গত রবিবার আদালতের মাধ্যমে তানিয়াকে একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তানিয়া জানান- তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০১৫ সালে দুবাই যান। ওখানে রাজুর সঙ্গে পরিচয়ের পর তারা বিয়ে করেন। ২০১৮ সালে দেশে চলে এলেও মাঝেমধ্যে টুরিস্ট ভিসায় দুবাই যেতেন। গত বছর রাজু দুবাই থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংকের ডেবিট কার্ড পাঠান ও তার পিনকোড দেন। দুবাইতে থাকা পরিচিত বড় ভাইয়ের কার্ড। তার টাকা তোলা জরুরি জানিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এরপর তানিয়া মাকে নিয়ে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকাগুলো তোলেন। ৪০ হাজার টাকা রেখে বাকিগুলো তিনটি ব্যাংকের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এর মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট রাজুর বলে জানিয়েছেন তানিয়া। অন্য অ্যাকাউন্টগুলো কার, তা তিনি জানেন না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই হাসানুজ্জামান বলেন, ‘রিমান্ডে তানিয়া জানিয়েছেন টাকা পাঠানোর অ্যাকাউন্টগুলো চিটাগাং শাখায়। ব্যাংকগুলো হচ্ছে সিটি ব্যাংক, ডাচবাংলা ও ওয়ান ব্যাংক।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজুকে স্বামী দাবি করলেও তানিয়া বিয়ের কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। রাজুর বাড়ি চট্টগ্রামে। তার পরিবারের সঙ্গে তানিয়ার পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই।’

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দুবাইতে ব্যবসা করি। সেখানে আমার ৬টি কোম্পানি রয়েছে। মামুন আমার ব্যক্তিগত গাড়িচালক। ওকে আমি অনেক বিশ্বাস করতাম। বিভিন্ন ব্যাংকের ২০টির মতো এটিএম কার্ড রয়েছে আমার। বেশির ভাগ সময় মামুনকে দিয়ে টাকা তুলতাম। এজন্য কার্ডের পিন নম্বর সে জানত। কিন্তু বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মামুন কার্ড চুরি করে।’

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন