ভাষার মাসে চিকিৎসার অভাবে কাঁদছেন ভাষাসৈনিক

  28-02-2020 06:40PM

পিএনএস ডেস্ক : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি? জ্বি, অবশ্যই ভুলিতে পারি! যদি ভুলে না যেতাম, তাহলে কিভাবে একজন ভাষাসৈনিকের এই দূরবস্থা হতে পারে? কেন ভাষার মাসে একজন ভাষাসৈনিক অর্থাভাবে চিকিৎসা না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছেন?

মানুষটা কাউকে দেখলে মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন। তারপর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। চোখের জলে বালিশটা ভিজে যাচ্ছে বারবার।

গত বছর ব্রেন স্ট্রোক করার পর তার ডান পাশ অবশ হয়ে যায়। এতে ডান হাত ও পা বিকল হয়ে যায়। স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না এখন। কথা জড়িয়ে যায়। শুনলে মনে হয় আবোল-তাবোল কী যেন বকছেন। অথচ ভুগছেন হার্টের রোগসহ নানা শারীরিক সমস্যায়। সারাদিন নিজের ভাঙা ঘরে শুয়েই দিন কাটে তার। এমন অসহায় অবস্থাতেই দিন কাটছে একজন বীরপুরুষের।

বয়স ৯০ ছুঁয়েছে। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ভাষাসৈনিক ও সাবেক গণপরিষদ সদস্য খন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় যে ভাতা পাচ্ছেন, সেটা দিয়ে কোনমতে দুই বেলা খেয়ে বেঁচে আছেন।

আজীবন নিজেই মানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। বেলাশেষে এখন হাতরে বেড়াচ্ছেন সেই মানবতা। ভাষা আন্দোলনে ছিলেন সক্রিয়, দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এমন দেশপ্রেমিকের দিন কাটছে অর্থভাবে বিনা চিকিৎসায়।

ভাষাসৈনিক খন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লার জীবনসঙ্গীনী সুরাইয়া মালেক স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। সারা জীবন মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত থাকা আব্দুল মালেকের সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই নেই।

মুক্তাগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল কাশেমের ভাষ্যমতে, ভাষাসৈনিক আব্দুল মালেক একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জীবনভর মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। অর্থ-সম্পদ কিছুই সঞ্চয় করতে পারেননি।

আন্তঃর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাসে একজন ভাষা সৈনিক ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। শত কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে বাংলা বর্ণমালা আজ বিশ্বদরবারে সমাদৃত, স্বীকৃত। সেই বর্ণমালাকে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করালেন যারা, তারা নিজেরাই এখন অসহায়ত্বের ছোবলে মাথা নুইয়ে জীবনযাপন করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই লিখছেন, মারা যাওয়ার পর হয়তো তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। অনেক শোক-দুঃখ প্রকাশ করা হবে। তাতে শ্রদ্ধেয় আব্দুল মালেকের কিইবা আসবে যাবে? বেঁচে থাকতেই যেখানে সামান্য চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

অনেকেই বলছেন, মৃত্যুর পর পাওয়া সম্মান দিয়ে কী করবেন? বেঁচে থাকতে আমরা গুণীর কদর দিতে জানি না বলেই হয়তো এই দেশে গুণী জন্মায় না।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন