বিদেশ ফেরতদের চেয়ে দেশিরাই বেশি করোনায় আক্রান্ত

  03-04-2020 06:08PM

পিএনএস ডেস্ক : গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরো পাঁচজন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৬১ জন হলো।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্ত ৫৬ জনের তালিকা পর্যালাচনা করে দেখা গেছে মাত্র ১৬ জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন আর ৪০ জন তাদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আক্রান্ত ১৬ জনের মধ্যে ছয় জন ইতালি ফেরত, তিন জন যুক্তরাষ্ট্র ফেরত আর দুই জন সৌদি আরব ফেরত। আর একজন করে জার্মানি, বাহরাইন, ভারত, কুয়েত ও ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরা।

আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘মূলত যারা বিদেশ থেকে এসেছেন বা সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে তাদের মাধ্যমে করোনা ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন। যেমন, একটি পরিবারে আমরা ছয় জনকে করোনা পজিটিভ পেয়েছি।’

দেশে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় মার্চের ৮ তারিখে আর আজ শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছেন ছয় জন।

সরকারের দেয়া তথ্য মতে, আক্রান্তদের বয়স হিসাব করে দেখা গেছে যে সবচেয়ে বেশি ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছে যাদের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে। তারপরেই রয়েছে যাদের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে।

তবে যখন মৃতের বয়স দেখি তখন দেখতে পাই ছয় জনের বয়সে ছিলো ৬০ এর উপরে— যার মধ্যে চার জন পুরুষ ও দুই জন মহিলা।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩২ জনের কোনো মৃত্যু ঝুঁকি ছিলো না।

আক্রান্তদের মধ্যে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। মোট ৬১ জন রোগীর মধ্যে বেশির ভাগই পুরুষ। তবে ভালো সংবাদ হলো ইতোমধ্যে ২৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কিটের সংকট নেই। রাজধানীসহ সারা দেশে নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীদের স্বপ্রনোদিত হয়ে বেশি বেশি করে নমুনা পরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরিতে যোগাযোগের আহ্বান জানান মন্ত্রী। প্রয়োজন ছাড়া বাসাবাড়ি থেকে বের না হতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানান তিনি।

ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরে ১২৬টি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ৩৮৭টি নমুনাসহ মোট ৫১৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫টি নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরের ৩টি নমুনাতে করোনা শনাক্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তাদের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে আছেন ২২ জন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ৭ জনসহ ২৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬ জন মারা গেছেন।

তিনি জানান, ঢাকায় ৯টি আরটি-পিসিআর এবং ঢাকার বাইরে ৫টিসহ মোট ১৪টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। চলতি এপ্রিল মাসের মধ্যে সারাদেশে ২৮টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষাগার স্থাপিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ৬৪ হাজার ৪৮৪ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ২৩৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে এবং ২৪৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৪ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয় এবং ১০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।

করোনা প্রতিরোধে দেশবাসীকে কোয়ারেন্টাইন বিধিমালা কঠোরভাবে মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে প্রতিরোধে সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে সতর্ক থাকলে করোনা বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে।

পিএনএস/ জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন