করোনার পিক টাইমে নির্বাচন, ঈদ-পশুর হাট : উভয় সংকটে সরকার

  09-07-2020 03:11PM

পিএনএস (আহমেদ জামিল) : বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে জুলাই মাস।করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে হচ্ছে, তাতে জুলাই মাসটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কারণ এই মাসের ১৪ জুলাই বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।আবার এই মাসের শেষেই মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে যাচ্ছে। একদিকে মানুষজনের বাড়ি যাওয়া, অন্যদিকে এবারের পশুর হাটের মাধ্যমে করোনা ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা। এখন এই জুলাই মাসই কাল হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় ভোটের এ তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ দুটি আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। কমিশনের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে ইসির এমন সিন্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অন্যদিকে কোরবানির সঙ্গে শুধু ধর্মীয় বিধানই জড়িত নয়, এর সঙ্গে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা ও দেশের অর্থনীতিও জড়িত। দেশের অনেক খামারি আছেন, যাঁরা এই ঈদ উপলক্ষে বছরব্যাপী পশু লালন-পালন করেছেন, গ্রামের অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন, যাঁরা একটা-দুটো গরু-ছাগল পালন করেন এই ঈদে বিক্রির জন্য। এখন করোনার কারণে চরম ঝুকিতে রয়েছেন তারা। অন্যদিকে কোরবানির পশুর চামড়া দেশের চামড়াশিল্পের কাঁচামালের জোগানের সিংহভাগ পূরণ করে, এই শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়েও বহু শ্রমিক ও ব্যবসায়ী জড়িত। সরকার মাথায় এদিকে অর্থনৈকি চিন্তা অন্যদিকে করোনার মহামারি ঝুকি নিয়ে সামনের দিকে এগুতে হচ্ছে।

ইতিমধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানগুলোতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবারো বসছে কোরবানির পশুর হাট। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই হাট বসবে বলে জানিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। হাটের ইজারার জন্য ইতোমধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনে ২৪টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। মেয়াদ হবে ঈদের দিনসহ আগের পাঁচ দিন। এবার গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটসহ সবকটি হাটে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে টিম থাকবে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। স্যানিটাইজার বা সাবান-পানির ব্যবস্থা রাখা, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা হাত পরিষ্কার রাখতে পারলে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ইজারাদারেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিয়ে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজদের একটি ঝামেলা রয়েছে। এদিকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

হাটের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও একটি নির্দেশনা আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, দূরত্ব মেনে কীভাবে হাট করা যায় এটা আমরা চেষ্টা করব।

তবে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা না হলে কোরবানির পশুর হাট করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, যেখানে-সেখানে পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করলে কোরবানির পশুর হাট ঝুঁকি ভয়ানক মাত্রায় নিতে পারে।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, শুধু ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পশুর হাট বন্ধ করা যাবে না। তবে ঝুঁকি কমাতে ক্রেতা-বিক্রেতা, হাটের ইজারাদার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারকে যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। প্রয়োজনে মানতে বাধ্য করতে হবে।ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই আবশ্যিকভাবে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, মাথার ক্যাপ ও সম্ভব হলে গাউন পরতে হবে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় মার্চ মাসের আট তারিখে। এরপর প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে চললো।

সেই সময় বলা হয়েছিল, এপ্রিল মাসটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে ক্রিটিক্যাল হয়ে উঠবে। তারপরে বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে মে মাস। এখন জুলাই মাসের কথা বলা হচ্ছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন