বনানী সামরিক কবরস্থানে শায়িত হলেন মেজর সিনহা

  04-08-2020 01:29AM

পিএনএস ডেস্ক: সামরিক মর্যাদায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। সোমবার (৩ আগস্ট) তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

নিহত সেনা কর্মকর্তা সিনহার বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এরশাদ খান। সিনহা ৫১ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করেন।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনায় জানা গেছে, ঘটনার দিন টেকনাফ থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে নিজস্ব প্রাইভেট কারে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন সিফাত নামের আরেকজন। মেজর (অব.) সিনহার গাড়িটি প্রথমে বিজিবির একটি চেকপোস্ট এসে থামে। পরিচয় পাওয়ার পর বিজিবি সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেন। এরপর রাত ৯টার দিকে সিনহার গাড়িটি এসে পৌঁছায় দ্বিতীয় চেকপোস্ট টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে। পুলিশের নির্দেশনা পেয়ে গাড়ি থেকে প্রথমে হাত উঁচু করে নামলেন সিফাত। এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামলেন মেজর (অব.) সিনহা।

সিফাতের ভাষ্য, কোনও রূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই মেজর (অব.) সিনহার বুকে একে একে তিনটি গুলি ছোড়েন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। মুহূর্তেই তিনি মাটিতে ঢলে পড়েন। সিনহার ব্যক্তিগত পিস্তল থাকলেও সেটি গাড়িতে ছিল।

তবে পুলিশের ভাষ্য অন্য রকম। পুলিশ বলছে, চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তা তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর সিনহা যে গেস্টহাউসে উঠেছিলেন সেই গেস্টহাউসে সিনহার কক্ষে তল্লাশি করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেখান থেকে বিদেশি মদ ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেছিলেন, শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেন। এই সময়ে তল্লাশি চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন তার পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করেন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার সকালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তার বুকে ও পিঠে জখমের দাগ আছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এলে বলা যাবে জখমের চিহ্ন গুলির কি-না।

সিনহার শরীরের ওপরের অংশ কর্দমাক্ত এবং বুক ও গলা গুলিবিদ্ধ ছিল। হাতে হাতকড়া লাগানোর দাগ ছিল বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

এদিকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটি মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) থেকে তদন্ত কাজ শুরু করবে। তার মৃত্যুর পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা পুনর্গঠন করা হয়েছে।

রোববার (২ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। পুনর্গঠিত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন