বৈরুতে বিস্ফোরণের পর ‘অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট’ নিয়ে দেশে তদারকি বাড়ল

  12-08-2020 10:27PM

পিএনএস ডেস্ক : লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর বাংলাদেশেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়মানুযায়ী ব্যবহার ও গুদামজাত হচ্ছে কি–না তাতে তদারকি বাড়িয়েছে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। যদিও বাংলাদেশে বিস্ফোরক তৈরির এই উপাদানটির আমদানির পরিমাণ খুবই কম।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বন্দরের কাছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের একটি গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এই পণ্যটি আমদানি, পরিবহন ও গুদামজাতকরণে এখন অনেক বেশি সতর্ক অনেক দেশ। আন্তর্জাতিক নৌসংস্থার নীতিমালা মেনে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো দাহ্য ও বিস্ফোরক তৈরির উপাদান সমুদ্রপথে পরিবহন করতে হয়। আবার দেশে পরিবহন ও সংরক্ষণেও কঠোর নীতি অনুসরণ করার কথা বলা আছে।


কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এই পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৩৯৪ মেট্টিক টন। এর আগের ২০১৮–১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ৫১৮ টন, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সবমিলিয়ে গত ছয় বছরে এক হাজার ৭৩৮ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানির হিসাব পাওয়া গেছে।


বন্দরের কর্মকর্তা জানান, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, বিস্ফোরকসহ অতি বিপজ্জনক পণ্য বন্দর দিয়ে আমদানি হলেও তা রাখার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, উচ্চমাত্রার দাহ্য, বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ বন্দর দিয়ে আমদানি হলেও বন্দরের গুদামে রাখা হয় না। জাহাজ থেকে নামানোর পরপরই প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে তা খালাস নিতে হয়। এ ধরনের পণ্য ব্যবস্থাপনায় যাতে কোনো ঝুঁকি তৈরি না হয় সে জন্যই এই ব্যবস্থা।

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক তৈরির উপাদান। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সার হিসেবে, খনিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফুয়েল বিস্ফোরক তৈরিতে এবং মেডিকেলে নাইট্রাস অক্সাইড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় বলে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের অধীনে ২০১৮ সালে সরকার অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিধিমালা প্রণয়ন করে। এই বিধিমালার আওতায় লাইসেন্স ছাড়া কেউ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি, খালাস, পরিবহন, ব্যবহার করার সুযোগ নেই। গুদামে রাখার জন্যও কঠোর নিয়মাবলী ও শর্ত রয়েছে।
সংস্থাটির হিসেবে, সরকারি প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড এবং বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানির লাইসেন্স রয়েছে। খনিতে পাথর উত্তোলনে বিস্ফোরনের জন্য এটি ব্যবহার হয়। আর চিকিৎসায় ব্যবহৃত নানা উপাদান তৈরির জন্যও এটি ব্যবহার হয়।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ
বলেন, এমনিতেই বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। বৈরুতের ঘটনার পর অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ সব ধরণের বিস্ফোরক পণ্য যাতে অননুমোদিত গুদামে রাখা না হয় সেজন্য সব বন্দর ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকেও তদারকি বাড়ানো হয়েছে। বৈরুতের মতো এখানে গুদামে পুরোনো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত নেই।

সার কারখানায় ব্যবহার নেই

বাংলাদেশে সার কারখানার জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানি করতে হয় না। কাঁচামাল হিসেবে ইউরিয়া সার তৈরির জন্য কারখানায় অ্যামোনিয়া উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে ইউরিয়া সার তৈরির পাঁচটি কারখানা রয়েছে দেশে।

আনোয়ারায় অবস্থিত চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) একজন কর্মকর্তা জানান, ইউরিয়ার কাঁচামাল অ্যামোনিয়া কারখানায় তৈরি হয়। ট্যাংকের মধ্যে তরল অবস্থায় রাখা হয়। এক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম কানুন অনুসরণ করা হয়।

তবে অ্যামোনিয়া গ্যাসও বিপজ্জনক পণ্য। সংরক্ষণ করা না গেলে এটিতেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট চট্টগ্রামের আনোয়ারার রাঙাদিয়া গ্রামে ডিএপি সার কারখানার তরল অ্যামোনিয়া ট্যাংকের বিস্ফোরণে মানবিক বিপর্যয় হয়। সে সময় জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্যাংকের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ ধরনের সুরক্ষা যন্ত্র সময়মতো মেরামত না করা এবং রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির কারণেই ট্যাংক দুর্ঘটনা ঘটে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা প্রণীত ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস বা আইএমডিজি কোড’ আছে। এতে ৯টি ক্যাটাগরির পণ্যের একটি তালিকা রয়েছে। তাতে বিস্ফোরক, বিপজ্জনক গ্যাস, দাহ্য তরল ও কঠিন পদার্থ, বিষাক্ত, তেজস্ক্রিয় ও জারণ পদার্থ আছে। এ ছাড়া রাসায়নিক, সার, শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল, বর্জ্য তেলসহ এ তালিকায় বিপুলসংখ্যক পণ্য রয়েছে। সাধারণত অন্য পদার্থের সংস্পর্শে এলে এসব পণ্য বিস্ফোরণ ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সে জন্য এসব পণ্য পরিবহন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত সতর্কতা মেনে চলতে হয়।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন