৯ মাসে গণধর্ষণের শিকার ২০৮ নারী

  01-10-2020 06:32PM

পিএনএস ডেস্ক: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়মাসে দেশে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬২ জন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

সংগঠনটি আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।

আসক জানায়, এ সময়কালে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

তবে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যা ও এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৬৮ নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭৩ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। এছাড়া স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ১২ নারী। এ সময়ের মধ্যে ১১ জন গৃহকর্মী হত্যার শিকার হন এবং ৩২ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ২ জন। এছাড়া এ সময়কালে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২১ নারী। শিশু নির্যাতন ও হত্যার গত ৯ মাসের পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময়কালে ১০৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে আসক জানায়, গত ৯ মাসে প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ২১৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’/বন্দুকযুদ্ধ/গুলিবিনিময়/এনকাউন্টারে নিহত হন ১৮৫ জন। এ সময়কালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মারা যান ২৭ জন। এই ৯ মাসে দেশের কারাগারগুলোতে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ৫৮ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৪ জন এবং হাজতি ৩৪ জন।

গত ৯ মাসে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের শিকার হন ৪ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৩ জনকে গেফতার দেখানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১ জন।

আসক বিবৃতিতে আরো জানায়, চলতি বছরের এ পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪৭টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪২ জন। এছাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ১টি বসতঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময়কালে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে ২০৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে বিজয় টিভির ধামরাই প্রতিনিধি জুলহাস উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময়ে ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ৩২ জন এবং শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ১৮ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ২০ জন। এ সময়কালে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন মোট ৩০ জন।

আসক উদ্বেগের সঙ্গে জানায়, গত ৯ মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়কালে মধ্যে সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা; বিশেষত ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক নির্যাতনের সংখ্যা এবং ঘটনার ধরণে ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০শে সেপ্টেম্বর সাভারে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। ২৩শে সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির বলপিয়ে আদাম এলাকায় চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে গণধর্ষণের পাশাপাশি তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়।

অন্যদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরীর টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্থানীয় ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মী কর্তৃক স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বরাবরের মতোই এ সময়কালেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের, অনেক ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় পুলিশের পরিদর্শক ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীর গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এর নামে প্রকৃতপক্ষে ‘বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড’ ঘটে চলেছে বলে গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীরা দাবি করে আসছে। পাশাপাশি কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেফাজতে রাজা ফকির নামে এক আসামির মৃত্যু হয়। রাজার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার পল্টন থানা হেফাজতে মাসুদ রানা নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একই তারিখে রংপুরের গঙ্গাচড়া থানা হেফাজতে নির্যাতনের কারণে এজারুল নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত করাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন ও হত্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ঘটেছে। এ বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময়কালে নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলা, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, নজরদারি ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানায় আসক।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন