আ.লীগে দল গোছাতে গিয়ে লাগছে প্যাঁচ

  22-01-2018 10:36AM

পিএনএস ডেস্ক:ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দুই দফা ঘোষণা করেও নানা অভিযোগে তা স্থগিত করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ও সদস্য মনোনয়নে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতরা থাকায় তীব্র ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে তিন মাসের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে। দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে জয়পুরহাট জেলা নেতাদের দ্বন্দ্ব নিরসনে দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে ডাকা বৈঠকের আগেই কার্যালয়ের সামনে বিবদমান নেতাদের অনুসারীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ঘোষণার আগেই ত্যাগীদের বাদ দিয়ে এক নেতার অনুসারীদের পদবি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। যে কারণে এখনো কমিটি ঘোষণা হয়নি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দলীয় মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হলেও এখন দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

দলটির নেতারা বলছেন, যখনই দলকে সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই নতুন করে প্যাঁচ লাগছে। এই জটিলতা নিরসন কবে হবে তা কেউ জানে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলকে শৃঙ্খলায় আনা। জেলা-উপজেলা, মহানগর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কোন্দল, নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানোর লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্র কাজ শুরু করলেও তা খুব বেশি কাজে আসছে না।

তবে দলটির নেতারা বলছেন, প্রয়োজনের সময়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবেই মাঠে নামে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সব ভেদাভেদ ভুলে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েই দলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন। তবে কিছুদিন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম-আইভীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে না এলেও সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার বসাকে কেন্দ্র করে তা সংঘাতে রূপ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে গতি বাড়ানো এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের দলের কাজে লাগাতে কেন্দ্রীয় উপকমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে একটি খসড়া তালিকা করা হয়।

সম্প্রতি ওই তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই তালিকায় দেখা যায়, দলের সহসম্পাদক ও সদস্য পদে বেশ কিছু ছাত্রদল, শিবির, ধর্ষক, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্ত ও হত্যা মামলার আসামি স্থান পেয়েছে। তবে কিছু ত্যাগী ও সাবেক ছাত্রনেতারও স্থান দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা ফেসবুকে ফাঁস হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। গত শনিবার ও গতকাল রোববার বিকালে ধানমন্ডি দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে সাবেক ছাত্রনেতারা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। আপাতত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে ওই কমিটি। অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা খসড়া প্রস্তুত করেছি, যাচাই-বাছাই চলছে। সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়ন করার উদ্যোগটি ভালো হলেও তা প্যাঁচ লেগে আটকে গেছে বলে মনে করেন ছাত্রনেতারা।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় শনির দশা যেন কাটছেই না। আজ-কাল-পরশু করে অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত বছরের ৫ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ২৬টি থানা, ৪৬টি ওয়ার্ড ও ৯টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। ওই সময় কমিটিগুলোর বিভিন্ন পদের নেতাদের নামে বিস্তর অভিযোগ ওঠায় কমিটি অনুমোদনের পরদিনই তা স্থগিত করে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি ওই কমিটির অভিযোগগুলো তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতাদের।

অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন তড়িঘড়ি করে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আবারও কমিটি অনুমোদন দেন মহানগরের ওই দুই শীর্ষ নেতা। এর পরে আবারও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কমিটির বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে গণবভনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি আবারও তা বাতিল করে দেন। উত্তরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণের কমিটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। কমিটি ঘোষণার পর বড় ধরনের অঘটনের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে দূরত্ব ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের। এ ছাড়া উপজেলা কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের জন্য গত শনিবার দলের সাধারণ সম্পাদক উভয়পক্ষকে নিয়ে দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণের আগেই দুই পক্ষের অনুসারীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিমুল আরেফিনের ওপর হামলা করে। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলকে সংগঠিত করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, তার মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেখানেই সমস্যা রয়েছে, সেখানকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় বৈঠক করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার কথা বললেও তারা কেউ কারও মুখ দেখেন না। এর আগে গত বছর দলের সাধারণ সম্পাদক যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইলসহ বেশ কয়েকটি জেলার কোন্দল নিরসনে বৈঠক করলেও কিছুদিন পর সে কোন্দল আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে গেছে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন