পুলিশের অনুরোধে অনশন শেষ : খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি

  14-02-2018 03:19PM


পিএনএস ডেস্ক: পুলিশের অনুরোধে নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘন্টা আগেই অনশন শেষ করেছে বিএনপি। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল দশটায় অনশন শুরু করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতারা। বিকেল চারটা পর্যন্ত এই কর্মসূচী পালন করার কথা ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুপুর একটার মধ্যেই তা শেষ করার অনুরোধ করলে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই অনশন শেষ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনশন কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। সকাল দশটায় কর্মসূচী শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই দলটির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব চত্তরে আসতে শুরু করেন।

এদিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনশন করছেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনশন পালন করবেন তিনি। তার সাথে রয়েছেন সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলামসহ বিএনপির কার্যালয়ের স্টাফবৃন্দ।

প্রেসক্লাবের সামনে সড়কের একপাশে কদম ফোয়ারা মোড় থেকে সচিবালয় মোড় পর্যন্ত হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

একপর্যায়ে ধীরে ধীরে কর্মসূচীতে ২০ দলীয় জোট, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী ও কৃষিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। মহিলা কর্মী-সমর্থকদেরর উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য।

বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনশন কর্মসূচী ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেন। এরআগে গত মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী, সোমবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সহ সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় আজকের অনশন কর্মসূচীতে বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আব্দুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগরীর বজলুল বাসিত আঞ্জু, কাজী আবুল বাশার, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহম্মেদ, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের মামুনুর রশিদ মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আমিনুল হক, এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, হারুনুর রশিদ, রিয়াজ উদ্দিন নসু, রফিক সিকদার, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, শামসুজ্জামান সুরুজ, যুবদলের নূরুল ইসলাম নয়ন, আ ক ম মোজাম্মেল, রফিকুল আলম মজনু, শরিফ উদ্দিন জুয়েল, হেলেন জেরিন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, ছাত্রদলের আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হাসান সোহান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, এনামুল হক এনাম, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, মফিজুর রহমান আশিক, রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, জিয়া পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদ প্রমুখ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকেরাও অনশন কর্মসূচীতে অংশ নেন। অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান এবং ড. মোর্শেদ হাসান খানের নেতৃত্বে ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন, ড. আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, ইসরাফিল প্রামাণিক রতন, অধ্যাপক অনুপম সেন, অধ্যাপক দেবশীষ পাল, অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন, অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সাবরিনা, অধ্যাপক আলামিন প্রমুখ। শিক্ষকেরা অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।

এদিকে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা গতকালও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অপর অংশের হামদুল্লাহ আল মেহেদী, এলডিপির শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, খেলাফত মজলিসের অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক, ইসলামিক পার্টির এম এ রকীব প্রমুখ।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য অনশন কর্মসূচীর সমাপনী বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে আমাদের অনশন বিকেল চারটা পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আমাদেরকে দুপুর একটার মধ্যেই কর্মসূচী শেষ করতে হয়েছে। আমি আজকের এই অনশন কর্মসূচী থেকে সরকারের কাছে আহ্বান রাখবো আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়াই আবারো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সেটা হতে দেয়া হবেনা। সরকার দেশনেত্রীকে বন্দি করে আগুনে হাত দিয়েছে। তারা আগুন নিয়ে খেলছে। মনে রাখবেন এদেশের জনগণ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই আগামী নির্বাচনে যাবে ইনশাল্লাহ।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকার একটি ভূয়া বানোয়াট মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে এবং বিএনপিকে দুর্বল করতেই এটা করা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে দুর্বল করা যাবেনা। আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করে আনবো ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, আগামীদিনে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবেনা। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আরো আন্দোলন হবে। খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবেনা।

মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে দেশের মানুষের স্বাধীনতা নেই। অথচ আমরা একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। দেশের স্বাধীনতা আজকে হুমকির সম্মুখে। আজকে ৪ দিন ধরে যারা খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন দেননি তাদের ব্যাপারে মামলা ও বিচারের প্রক্রিয়া নেয়ার দাবি জানাচ্ছি, বিএনপি মহাসচিবকে বলে তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বেগম জিয়ার মামলার রায়ের কপি পাওয়ার কথা থাকলেও তা মেলেনি। আসলে তাদের দীর্ঘসূত্রিতা প্রমাণিত হয় তারা খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রাখতে চায়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিচারকদেরকে ক্যালকুলেটর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২ কোটি টাকার জন্য যদি পাঁচ বছর জেল হয় তাহলে হলমার্ক সহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য কত বছরের জেল হবে? সেটা মাথায় হিসাব করা যাবেনা। এ জন্য বিচারকদেরকে ক্যালকুলেটর দেয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন