১৯ মার্চ ফের সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির

  12-03-2018 01:11PM

পিএনএস ডেস্ক: কারান্তরীণ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ ১২ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্বঘোষিত সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে একইস্থানে ১৯ মার্চ ফের সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

সোমবার (১২ মার্চ) সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির উদ্যোগে চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জনসভা অনুষ্ঠিত করতে আমরা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। জনসভা সফল করতে প্রচারপত্র বিলি থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর এবং বৃহত্তর ঢাকা জেলার নেতৃবৃন্দসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করা হয়। এ উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ও পুলিশ কমিশনার বরাবরে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বতোভাবে সংঘাত এড়িয়ে গণতন্ত্রে স্বীকৃত বিরোধীদলের অধিকারগুলোকে প্রয়োগ করতে চাই। সভা-সমাবেশ বিরোধী দলের সার্বজনীন অধিকার। এটি কোনও বেআইনি কর্মসূচি নয়। আজকে কোনও কারণ ছাড়াই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে জনসভা করতে দেয়া হলো না। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে এ মুহূর্তে কোনও কর্মসূচিতে না গিয়ে আগামী ১৯ মার্চ সোমবার পুনরায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠানের ঘোষণা করছি। আমি আশা রাখি যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কর্তৃপক্ষসহ পুলিশকে চিঠি দিয়ে অবহিত করি। কিন্তু বইমেলার দোহাই দিয়ে পুলিশ কোথাও জনসভা করার অনুমতি দেয়নি। সেসময় মৌখিকভাবে তারা পরবর্তী মাস অর্থাৎ এই মার্চ মাসে জনসভা অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছিল।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কখনও কখনও আমাদেরকে জনসভার অনুমতি দিলেও সেটিকে একেবারে ছোট্ট পরিসরে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। জনসভার আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে জনমনে ভয়ের সঞ্চার করা হয়, যাতে বিএনপির জনসভায় লোকসমাগম কম হয়। যেমনটি ঘটেছে খুলনায়। হাদিস পার্কের মাঠে জনসভার অনুমতি না দিয়ে চারিদিকে ১৪৪ ধারা জারি করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট্ট জায়গায় অনুমতি দেয়া হয়। ১৪৪ ধারা জারির মূল উদ্দেশ্য জনসভাস্থলে জনগণ যাতে যোগ দিতে না পারে।’

‘গণবিচ্ছিন্ন সরকার জন-আতঙ্কে ভোগে’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের বিপুল সমাগমের সম্ভাবনা থাকলে সরকার অজানা আশঙ্কায় বিপন্নবোধ করে। এ কারণে বিএনপি’র জনসভাকে বানচাল করতে সরকার ধারাবাহিক বাধা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।’

বিএনপির এই শীর্ষনেতা আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে বিক্ষোভ-সমালোচনা। গণতন্ত্র মানে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের একতরফা বলে যাওয়া নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাবলিক প্রপার্টি, এটি কোনও ব্যক্তি, দল বা জোটের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা সম্পত্তি নয়। সেখানে যদি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ মহাজোটের অন্যান্য দল সমাবেশের অনুমতি পায়, তাহলে বিএনপিকে জনসভা করতে না দেয়া ক্ষমতাসীনদের হুঙ্কারসর্বস্ব রাজনীতিরই প্রতিফলন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সভা-সমাবেশ যেকোনও রাজনৈতিক দলের সংবিধানস্বীকৃত অধিকার। কিন্তু বর্তমান সরকার বিরুদ্ধ স্বরকে থামিয়ে দিতে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশকে বাধা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচির ওপর। দমন-পীড়নকে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান এজেন্ডা হিসেবে ধরা হয়েছে। দেশে এখন বিষণ্ন নৈরাজ্যের ঘন অন্ধকার চারিদিকে পরিব্যাপ্ত হয়েছে।’

এসময় মির্জা ফখরুল জানান, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম, ১৯ মার্চ ঢাকা, ২৪ মার্চ বরিশাল এবং ৩১ মার্চ রাজশাহীতে সমাবেশ করবে বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড.আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও বেলাল আহমেদ প্রমুখ।

এদিকে জিয়া অরফানেস্ট ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে রায়ের জন্য সোমবার দিন ধার্য রয়েছে। দুপুর ২টা নাগাদ জামিন আদেশের জন্য উচ্চ আদালতের আজকের কার্যতালিকায় সময় নির্ধারিত আছে।

একই বেঞ্চে রবিবারও মামলাটি জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য রাখা ছিল। কিন্তু মামলার নথি না পৌঁছানো ও আদালতের দেয়া ১৫ দিন সময় শেষ না হওয়ায় আদেশের জন্য সময় পিছিয়ে সোমবার দিন ধার্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন